গণমিছিল কর্মসূচি দিয়ে আবার রাজপথে যাচ্ছে বিএনপি


সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচির রোডম্যাপ চূড়ান্ত করছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ১১ আগস্ট শুক্রবার গণমিছিলের মধ্য দিয়ে শুরু হতে পারে যুগপৎ আন্দোলন। শুধু ঢাকাতেই হবে এ কর্মসূচি। দেশের কোথাও কোথাও বন্যা হওয়ায় এবং অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর বাইরে কর্মসূচি দেওয়া হবে না। সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম ও সমন্বয়হীনতার বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ নিয়ে কেউ কেউ কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ওইদিন দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার চিত্রই ফুটে উঠেছে। তাই আগামীদিনের কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া উচিত। পরে একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বয় করে কর্মসূচি প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একদফার যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। ঢাকার প্রবেশপথে লোকসমাগম বেশি হয়নি বলে প্রচারণা আছে-এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সঙ্গে আমি একমত নই। কর্মসূচিতে আমাদের হাজার হাজার, লাখো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিল। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, একদফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে পয়েন্ট আকারে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছি। সবার মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।ঢাকায় মহাসমাবেশ সফলভাবে শেষ করে বিএনপি। পরদিন (২৯ জুলাই) ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢাকায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তেমনটা দেখা যায়নি। সকাল থেকে নির্দিষ্ট স্পটগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রবেশপথগুলোয় অবস্থান নিতে গেলে তাদের বাধার মুখে পড়ে। শুরু হয় সংঘর্ষ। ধাওয়া-পালটাধাওয়া, ভাংচুর ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের বাধায় পিছু হটে বিএনপি নেতাকর্মীরা। হামলার প্রতিবাদে দেশের সব মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হলেও একদফার কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে কয়েক দিন আগে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এসব বৈঠকেও ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে শরিকদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। সবার সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কর্মসূচি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। ভবিষ্যতে একদফার ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়নে বিএনপিকে আরও কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দেন। আপাতত ঢাকায় সভা-সমাবেশ, অবস্থান ও পদযাত্রার মতো কর্মসূচি দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন শরিকরা। তারা জানান, আন্দোলন দমাতে হামলা-মামলা ও দমনপীড়নের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। তখন পরিস্থিতি বিবেচনায় হঠাৎ করে কর্মসূচি পরিবর্তন করা যেতে পারে।একদফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের অবস্থান চূড়ান্ত করতে সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় প্রতি সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হলেও ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচির পর এটাই ছিল প্রথম বৈঠক। ওই কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম হওয়ায় দলের হাইকমান্ড চরম ক্ষুব্ধ ছিল। কর্মসূচির পর কয়েক দিন কোনো নেতার সঙ্গেই কথা বলেননি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে অনেকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার থেকে শুরু হয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই তা শেষ করা হয়। শরিকদের মতামতগুলো প্রতিবেদন আকারে তৈরি করে তা স্থায়ী কমিটিতে হস্তান্তর করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এক নেতা বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব ছিল। যাদের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা সেটা সঠিকভাবে পালন করেননি। কেন্দ্রীয় নেতাদের যেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের বের্শির ভাগই সেখানে যাননি। মহানগর নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সারা দেশের নেতাকর্মীরা কোন প্রবেশপথে থাকবেন তাও আগে থেকে জানানো হয়। কিন্তু কর্মসূচির দিন দেখা গেছে মহানগরের অনেক নেতাকর্মীই যাননি। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই সেটা সম্ভব হয়নি। সারা দেশের নেতাকর্মীদের চিত্রও ছিল একই। ফলে যেভাবে কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল সেটা হয়নি। কয়েক নেতা বলেন, ভবিষ্যতে কর্মসূচি চূড়ান্তের আগে এবং তা বাস্তবায়নে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত। কর্মসূচি চূড়ান্তের আগে সমমনাদের পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করা যেতে পারে। পরে সবাইকে সমন্বয় করে কর্মসূচি প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।এরপর নতুন কর্মসূচি নিয়ে শরিকদের মতামতসহ নেতারা নানা পরামর্শ দেন। ১৫ আগস্টের এক-দুদিন আগে না দিয়ে শুক্রবার কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে। সবার মতামতের ভিত্তিতে শুক্রবার ঢাকায় গণমছিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আলাদাভাবে পালন করা হতে পারে এ কর্মসূচি। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোও একই দিন এ কর্মসূচি পালন করবে। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা জানান, শুক্রবার তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। সেদিন যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে আমরা হয়তো একদিন পরে পালন করতে পারি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠক রয়েছে।