গাজায় রুটির বদলে মিলছে গুলি
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ভোরের আলো ফোটার আগেই হাজারও ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় জমে গাজার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। শিশুদের কান্না থামাতে বাবা-মারা ছুটে যান রুটির খোঁজে।কিন্তু দুর্ভাগ্য; রুটির বদলে তারা ফিরছেন মাথায় গুলি নিয়ে-কেউ স্ট্রেচারে করে। কেউ লাশ হয়ে। খাদ্য সংকটে বিধ্বস্ত গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যখন মানুষ ট্রাকের পাশে ত্রাণের আশায় জড়ো হয় ঠিক তখনই নামে ইসরাইলি বুলেটবৃষ্টি।সম্প্রতি রাফা ও খান ইউনিসে মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের এই ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে পড়ে গুলিবদ্ধ হয়েছেন শত শত ফিলিস্তিনি। নিহত হয়েছেন অনেকেই। শুয়াইব আবু তইর তাদেরই একজন। রোববার তার চার সন্তানের জন্য রুটি আনতে গিয়েছিলেন তিনিও। কিন্তু ফিরেছেন মাথায় গুলিবদ্ধ হয়ে। আলজাজিরা।কয়েক সপ্তাহ ধরেই গাজায় সহায়তা কেন্দ্রগুলো হয়ে উঠেছে গোপন মৃত্যুফাঁদ। রোববার এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিএ)।যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান (জিএইচএফ) পরিচালিত এসব বিতরণ পয়েন্টে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ। স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ ঘারিব জানিয়েছেন, রোববার রাফায় হাজার হাজার মানুষকে একটি মার্কিন বিতরণ পয়েন্টের ৫০০ মিটার দূরে আল-আলম গোলচত্বরে জড়ো হতে বলা হয়েছিল।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ভিড় যখন বাড়তে থাকে তখন হঠাৎ করে চারদিক থেকে গুলি চালায় ইসরাইলি বাহিনী। তারা আরও বলেছেন, মাথা আর বুক লক্ষ্য করেই গুলি চালায় বর্বর সেনারা। এ দিন গুলিবদ্ধ হন আবু তইরও।তার শ্যালিকা আসমা আবু সালাহ বলেছেন, ‘সে তো শুধু বাচ্চাদের খাবার আর পানির জন্য গিয়েছিল।ওর সন্তানরা তাকে বলেছে, ‘বাবা, আমাদের খাবার দাও’। এই কথাটাই সবচেয়ে কষ্টের। সে তো শুধু রুটি আনতে গিয়েছিল। রুটির বদলে ওরা তার মাথায় গুলি মেরেছে।’গাজার ফিল্ড হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল-হেমস এটিকে একটি গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন। রোববারের পর সোমবারও ত্রাণের লাইনে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে তিনজন নিহত এবং অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।এর আগে গত মঙ্গলবার ও বুধবারও একই তাণ্ডব চালিয়েছে সেনারা। ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০০ জনেরও বেশি।ত্রাণকেন্দ্র ছাড়াও গাজাজুড়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। সোমবার আলজাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার একমাত্র কিডনি ডায়ালাইসিস কেন্দ্র নূরা আল-কাবি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে।ইসরাইলি বর্বরতায় সোমবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৪৭০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ২৪ হাজার ৬৯৩ জন আহত হয়েছেন।
