গাজায় হিরোশিমার চেয়ে ৬ গুণ শক্তিশালী বোমা ফেলেছে ইসরাইল


গাজায় হিরোশিমার চেয়ে ৬ গুণ শক্তিশালী বোমা ফেলেছে ইসরাইল
গাজা ধ্বংস করার জন্য ইসরাইল হিরোশিমার চেয়েও ছয়গুণ বেশি শক্তিশালী বোমা ফেলেছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। তিনি বলেছেন, গাজা ধ্বংস করার জন্য ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক হিরোশিমার ছয়গুণ শক্তিশালী নিক্ষেপ করেছে। এগুলো নিক্ষেপ করার জন্য ইসরাইলকে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করে অস্ত্র কোম্পানিগুলো প্রায় রেকর্ড মুনাফা অর্জন করেছে। গাজায় আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য ইসরাইলই দায়ী। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ফিলিস্তিনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে তিনি এসব কথা বলেন। খবর আলজাজিরার।ফ্রান্সেসকা আলবানিজ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মার্কিন-ইসরাইল পরিচালিত তথাকথিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’কে ‘একটি মৃত্যুফাঁদ-যা ক্ষুধার্ত, বোমাবর্ষণকারী, ক্ষীণকায় জনগোষ্ঠীকে হত্যা বা পালিয়ে যেতে বাধ্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে’ বলে নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সরকারি পরিসংখ্যানে ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন। তবে শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।’গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৮১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়া ১২ জন ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন। ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬৫২ ত্রাণপ্রার্থী ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন চার হাজার ৫৩৭ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলের হামলায় অন্তত ৫৭ হাজার ১৩০ জন নিহত এবং এক লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন আহত হয়েছেন।এ অবস্থায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত যুদ্ধের সময় বিভিন্ন মহলের ‘অর্থনৈতিক লাভের’ কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত ২০ মাসে অস্ত্র কোম্পানিগুলো গাজায় বোমা হামলার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র ইসরাইলকে সরবরাহ করে ‘প্রায় রেকর্ড মুনাফা’ অর্জন করেছে।তিনি বলেন, ‘গাজা ধ্বংস করার জন্য ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক- হিরোশিমার ছয়গুণ শক্তিশালী-এগুলো নিক্ষেপ করার জন্য ইসরাইলকে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করে অস্ত্র কোম্পানিগুলো প্রায় রেকর্ড মুনাফা অর্জন করেছে।’প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে ২১৩% লাভের দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা একটি সম্পূর্ণ বৈপরীত্য তুলে ধরে : ‘একজন মানুষ সমৃদ্ধ হয়েছে, একজন মানুষ মুছে গেছে।’নতুন অস্ত্র, কাস্টমাইজড নজরদারি, প্রাণঘাতী ড্রোন এবং রাডার সিস্টেম পরীক্ষা করার জন্য ইসরাইল যুদ্ধকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করে আলবানিজ সতর্ক করেন, ফিলিস্তিনের প্রতিরক্ষাহীনতা ‘ইসরাইলি সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের জন্য একটি আদর্শ পরীক্ষাগারে’ পরিণত হয়েছে।তিনি অস্ত্র প্রস্তুতকারক, ব্যাংক, প্রযুক্তি কোম্পানি, জ্বালানি জায়ান্ট এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানসহ ৪৮টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, তারা ইসরাইলি রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি বৃহত্তর ‘দখলদারিত্বের অর্থনীতির’ সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। রাষ্ট্রগুলোর প্রতি সরাসরি আবেদনে আলবানিজ সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইসরাইলের ওপর পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, সব বাণিজ্য চুক্তি এবং বিনিয়োগ সম্পর্ক স্থগিত করতে হবে এবং জবাবদিহিতা কার্যকর করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনে জড়িত থাকার জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের আওতায় আনা যায়।তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জোর দিয়ে বলেন, ‘করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে (ইসরাইলের সঙ্গে) সব ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, অবদান রাখা এবং ঘটানো সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।’আলবানিজ বলেন, শুধু অজ্ঞতা বা আদর্শগত কারণে গণহত্যার মাঝেও বিশ্বব্যাপী এত নিষ্ক্রিয়তা চলছে, এটি তিনি আর বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, ‘গণহত্যা এটি এতই দৃশ্যমান, এতই সরাসরি সম্প্রচারিত-এসবের মুখে এই ব্যাখ্যাগুলো (অজ্ঞতা কিংবা আদর্শগত কারণ) অসম্পূর্ণ।’তিনি নাগরিক সমাজের প্রতি গণহত্যা বন্ধে সরাসরি ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য শেষ করেন। তিনি বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়ন, আইনজীবী, নাগরিক সমাজের সংগঠন, সাধারণ নাগরিকদের ও সরকারগুলোর পক্ষ থেকে বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং জবাবদিহিতার জন্য চাপ দিয়ে আচরণগত পরিবর্তনকে উৎসাহিত করা উচিত। এরপর কী হবে, তা আমাদের সবার ওপর নির্ভর করে।’