চট্টগ্রামে একযোগে চার ধরনের জ্বরের প্রকোপ


চট্টগ্রামে একযোগে চার ধরনের জ্বরের প্রকোপ
চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে নানা রকম জ্বর ও শরীর ব্যাথার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এমন উপসর্গে ডেঙ্গু, করোনাভাইরাস ও চিকুনগুনিয়া ভেবে বাড়ছে উদ্বেগ। কিন্তু জ্বরের কারণ না বুঝেই অনেকে ইচ্ছামতো ওষুধ সেবন করছেন। হাসপাতালে আসছেন শারীরিক পরিস্থিতি বেশি অবনতি হলে। চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু, করোনা ও চিকুনগুনিয়ায় জ্বরের উপসর্গ প্রায় একই রকম দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর রোগের একটি উপসর্গ; এটি কোনো রোগ নয়। জ্বর হওয়াকে বলা যেতে পারে কোনো রোগের সতর্কবার্তা। ঠাণ্ডা বা সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। কোনো কারণে শরীরে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ হলেও হতে পারে জ্বর। টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, করোনাভাইরাস, চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাথমিক লক্ষণও জ্বর। এছাড়া ফোড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন, টিকা নিলে, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে। তবে চট্টগ্রামে একযোগে চার ধরনের জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ ডেঙ্গু, সাধারণ ভাইরাল জ্বর (ফ্লু), চিকুনগুনিয়া এবং করোনাভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বলে চিকিৎসকদের অভিমত। প্রতিদিনই জ্বরের রোগী ভিড় করছেন চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। সবচেয়ে বেশি রোগী আসছেন উচ্চমাত্রার জ্বর ও অস্থিতে তীব্র ব্যথা নিয়ে। যা চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণ। আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এ ধরনের জ্বরের মধ্যে শরীরের ব্যথার তীব্রতা ভয়াবহ। জ্বর কমে আসলে কারো করো শরীরে রেশ ছড়িয়ে পড়ছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা পুরো শরীর অস্বাভাবিক আচরণ করছে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর সেরে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী জয়েন্ট ব্যথা থেকে যাচ্ছে। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের শরীরে হঠাৎ করে জ্বর আসে। সঙ্গে তীব্র জয়েন্ট ব্যথা, দুর্বলতা ও র‍্যাশ দেখা দিচ্ছে, কখনো অস্থিসন্ধি ফুলে যাওয়া। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত এক মাসে শুধুমাত্র চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ৭ হাজার ৫০০ জন রোগী। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার জন, আর ফ্লু ও কোভিড-সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ অনেক রোগী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে না গিয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায় থেকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. রিয়াজুর রহমান রিয়াদ বলেন, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন চিকুনগুনিয়া আক্রান্তরা। অনেকেই স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছেন না। এই উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনই নতুন রোগী আসছে । খবর নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবগুলোতেও পজিটিভিটি রেট অনেক বেশি। চট্টগ্রামে এভারকেয়ার হাসপাতাল ১৩২টি পরীক্ষার মধ্যে ৬৫ জন, এপিক হেলথকেয়ারে ১৮৫ জনের মধ্যে ১৫৩ জন এবং পার্কভিউ হাসপাতালে ৫৩ জনের মধ্যে ৪২ জন রোগী চিকুনগুনিয়ায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। সংক্রমণের হার ৪৯ শতাংশ থেকে ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত। সাম্প্রতিক সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৭১ শতাংশ রোগীর দেহে পজিটিভ পাওয়া গেছে চিকুনগুনিয়া। এদিকে জ্বর রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষার ব্যবসাও দ্রুত বেড়েছে। সরকারি হাসপাতালে সীমিত সুযোগের কারণে মানুষ বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছে। চিকুনগুনিয়া টেস্ট করাতে আনুসাঙ্গিক খরচ ছাড়া টেস্ট করতে নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। চলতি জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি ফ্লু বা সাধারণ ভাইরাল জ্বরের প্রকোপও বেড়েছে। এ সংক্রমণ বেশি দেখা দিচ্ছে বাচ্চা ও বয়স্কদের মধ্যে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনা উপসর্গসহ রোগীও পাওয়া যাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের জ্বরে নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। জনগণকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি মশানিধনে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীলরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর পরও আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে মশা দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বাড়ির আঙিনা ও ড্রেন পরিষ্কার রাখার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।