জাতিসংঘের টিমের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক, কী কথা হলো


বাংলাদেশে গণহত্যার বিষয়ে অনুসন্ধানে আসা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন টিমের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানস্থ জাতিসংঘ অফিসে এ বৈঠক হয়। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলে ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহর মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। বৈঠক শেষে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে ঐতিহাসিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মানুষ নতুনভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই গণবিপ্লবের সময় সরকার যে হত্যা, জুলুম, নির্যাতন করেছিল, সেই বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং টিম বাংলাদেশ সফর করছে। তারা শনিবার চলে যাবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকেও তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এসময় কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা মূলত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং টিম। এরপর মূল টিম আসবে। তিনি বলেন, আমরা মূলত বিগত স্বৈরাচারী সরকার এ দেশের জনগণের ওপর নানাবিধ অত্যাচার করেছেন, হত্যাকাণ্ড করেছেন, এসব বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছিল, আমরা তাদের তথ্য দিয়েছি। আওয়ামী সরকার ১৯৭২-৭৫ সালে ক্ষমতায় ছিল। তখন তারা ৩০ হাজারের মতো মানুষ হত্যা করেছিল। এবার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিডিআরের ঘটনায় ৫৭ সামরিক অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গেও স্বৈরাচারী জনবিচ্ছিন্ন সরকার জড়িত ছিল। রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে যে গণহত্যা করেছিল, আমরা সেটার কথাও তাদের বলেছি। সর্বশেষ এই ছাত্র-জনতার মহাবিল্পবকে ব্যর্থ করার জন্য তারা নির্বিচারে যে গণহত্যা চালিয়েছিল, সেটাও তাদের অবহিত করেছি। সে সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয় সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর। মনে হয়েছিল, বিদেশীদের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজ জনগণের ওপর এ ধরনের হত্যাকান্ড সারা বিশ্বে নজিরবিহীন। সেখানে দেড় বছরের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। আমরা এটাকে বলেছি, জেনোসাইড বা গণহত্যা। এটাকে জেনোসাইড হিসেবে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছি। ডা. তাহের বলেন, বিচারের জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কতিপয় আইন সংশোধনের মাধ্যমে ক্রাইম অ্যাগেইনিস্ট হিউম্যানিটি এই নামে ট্রাইব্যুনাল করে তদন্ত ও সঠিকভাবে এর বিচার নিশ্চিত হতে পারে, সেভাবে বাংলাদেশকে তারা যেন সহযোগিতা করে সেই বিষয়ে আমরা অনুরোধ করে আসছি। তিনি বলেন, তারা এই সমস্ত হত্যাকান্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এই সব বিষয়ে জানার জন্য তারা এসেছেন। এসব নিয়ে তারা বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করছে। ফ্যাক্টসগুলো নিয়ে তারা রিপোর্ট দিবে। এরপর বিচারে সহযোগিতা, আইন সংশোধনে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞগণ আসবেন। তারা বাংলাদেশ সরকারকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করবে। জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার কার্যালয় এশিয়া-প্যাসিফিক সেকশনের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেন। প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যরা হলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক সেকশনের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা লিভিয়া কসেনজা এবং আলেকজান্ডার জেমস আমির এই জুঙদি।