জিরো ক্লিক হ্যাক!


জিরো ক্লিক হ্যাক!
ইসরায়েলি দাপুটে আর গোপন প্রযুক্তিবিদ্যার কাছে পুরো বিশ্বই যেন নিশানা হয়ে পড়েছে। নতুন করে স্পাইওয়্যার ছড়ানোর অভিযোগে আবারও সামনে আসছে পেগাসাস বিতর্ক। লক্ষ্য এবার জনপ্রিয় সোশ্যাল অ্যাপ। হ্যাঁ, নতুন শঙ্কা ছড়িয়েছে, কোনো রকম লিঙ্ক ছাড়াই ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। আর কাজটি করছে হ্যাকার চক্র। লিখেছেন সাব্বিন হাসাননিজের স্মার্টফোনে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার প্রয়োজন নেই। শুধু টার্গেট করে হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করা সম্ভব। হ্যাঁ, সত্যিই এমনই ঘটছে। করতে হবে না কোনো কোড স্ক্যান, তাও হ্যাক হবে; হ্যাঁ ঠিকই জেনেছেন। উল্লিখিত দুটি কারণ না ঘটা সত্ত্বেও নিজের ব্যবহৃত ফোন চলে যেতে পারে হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে।বিশ্বের অনেক দেশেই এমন অত্যাধুনিক হ্যাকিং সফটওয়্যারের খোঁজ মিলেছে। আর এমন বিষয়ে সতর্কবার্তা শুনিয়েছে খোদ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ নিজেই। এই মেসেজ সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে সংস্থাটি।ইতোমধ্যে ২৪টি দেশের শতাধিক গ্রাহক এমন হ্যাকিং ঘটনার তথ্য-প্রমাণ দিয়েছে বলে অ্যাপ উন্নয়ক সংস্থার কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে। খবরে প্রকাশ, এমন হ্যাকিং ঘটনার পেছনে দায়ী ইসরায়েলের সংস্থা ‘প্যারাগন’ সল্যুশনের নির্মিত বিশেষায়িত স্পাইওয়্যার। সংবাদমাধ্যম দাবি করে, মূলত সাংবাদিক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের চূড়ান্ত লক্ষ্য করে তাদের ফোনে অবিরাম স্পাইওয়্যার ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সরকারি কোনো বিশেষ সংস্থার নিয়ন্ত্রণে ও নির্দেশনায় এ স্পাইওয়্যার পরিচালিত হচ্ছে।নব্য ধারার এমন হ্যাকিং পদ্ধতিকে ‘জিরো ক্লিক হ্যাক’ বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা। স্মার্ট ডিভাইসে কোনো রকম লিঙ্ক বা সংযুক্তি (অ্যাটাচমেন্ট) দৃশ্যমান হলে তাতে ক্লিক করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্পাইওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায়। ওই মুহূর্তেই আক্রান্ত ডিভাইসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে হ্যাকাররা। ঠিক এসব কারণেই কোনো রকম সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।নতুন যে পদ্ধতির কথা হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাতে কোনো রকম লিঙ্কে ক্লিকই করেই বিপদে পড়েছেন অনেকে। ক্লিক ছাড়াই এনক্রিপটেড মেসেজ থেকে ডিভাইসের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বসে হ্যাকার চক্র।নিজস্ব বার্তায় হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছেন এমন সংখ্যা প্রায় শতক ছুঁয়েছে। যদিও অভিযোগের সদুত্তরে এখনও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি অ্যাপ উন্নয়ন বিভাগ। এমনকি কারও পরিচয়ও উপস্থাপন করেনি হোয়াটসঅ্যাপ। প্রথম ঘটনাটি সামনে আসে গত ডিসেম্বরে। তখন থেকেই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন বিভাগের সঙ্গে কাজ করছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হ্যাকিং ঘটনার সূত্র ধরে কীভাবে ইসরায়েলি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে হোয়াটসঅ্যাপ, সে বিষয়ে সরাসরি কিছুই বলেনি ভুক্তভোগী সংস্থা।রিপোর্টের সূত্র ধরে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের গোপনীয়তার সুরক্ষায় সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ইসরায়েলি ওই সংস্থাকে দাপ্তরিক নিয়মে সতর্ক করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এমন বিষয়ে এখনও সামনাসামনি কথা বলার সময় হয়নি বলে মন্তব্য করেছে কর্তৃপক্ষ। কয়েক বছর আগে সারাবিশ্বে পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তখনই ইসরায়েলের নাম সামনে আসে। নির্দিষ্ট (টার্গেট) ডিভাইসে অবৈধ নজরদারি করার জন্যই সিস্টেমটির ডেভেলপ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। নতুন করে আবার পুরোনো সমালোচনার মুখে পড়েছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার। এখন দেখার বিষয়, হোয়াটসঅ্যাপ কীভাবে এমন পরিস্থিতি সামলে গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কারণ, অ্যাপটি তুমুল জনপ্রিয়তার পেছনে মূল কারণই হচ্ছে ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা।