ট্রাম্পের প্রথম দিন থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান


ট্রাম্পের প্রথম দিন থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান
নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ আজ। এর মধ্য দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ফের ট্রাম্প ২.০ যুগের সূচনা হচ্ছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তন করবেন। ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এ শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করছেন ন্যাশনাল গার্ডের ৭৮০০ সদস্যসহ ২৫ হাজার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য। এদিন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও শপথ নেবেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প-ভ্যান্সের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। খবর এএফপি, সিএনএন, স্কাই নিউজ, আলজাজিরা, রয়টার্সের। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় (গ্রিনেচ মান সময় ১৭.০০ বা বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১১টা) শুরু হয়। গত কয়েক বছরে ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম লনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হলেও এবার সেটি হবে ক্যাপিটল রোটুন্ডায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার শপথের দিন দুপুরে তাপমাত্রা মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকতে পারে। তবে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড ও সংগীতানুষ্ঠান হবে ইনডোর ভ্যানু ক্যাপিটল ওয়ান এরিনায়। ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে নতুন করে এ সদ্ধিান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ট্রাম্প নিজেই ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান। ট্রাম্প বলেন, খুব ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে আমি প্রার্থনা, অন্যদের বক্তৃতা এবং আমার শপথ ও অভিষেক ভাষণটি ইউএস ক্যাপিটল হিলের হলরুমে আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছি, যেমনটি ১৯৮৫ সালে রোনাল্ড রিগান করেছিলেন। ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড আয়োজন করতে সোমবার ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনা (ইনডোর ভ্যানু) খুলে দেওয়া হবে। আমার শপথগ্রহণের পর আমি ক্যাপিটাল ওয়ানে সবার সঙ্গে যোগ দেব। সাধারণত মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথবাক্য পাঠ করান। এবার জন রবার্টস দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় নেওয়া শপথে তিনি বলবেন, আমি দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, বিশ্বস্ততার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব এবং আমার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করব। ২০১৭ সালে প্রথম অভিষেকের সময় ট্রাম্প ১৮৬১ সালে আব্রাহাম লিংকনের শপথ নেওয়া বাইবেলে ছুুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তার প্রয়াত মা মেরি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্পের উপহার দেওয়া দ্বিতীয় আরেকটি বাইবেলও ছিল। মিডিয়া রিপোর্টে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এবারও ট্রাম্প সেই দুটি বাইবেল ছুঁয়েই শপথ নেবেন। ট্রাম্পের শপথ উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ সংস্করণের বাইবেল এখন ৬৯.৯৯ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। শপথ শেষে নতুন প্রেসিডেন্ট আগামী চার বছরের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। একই দিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে জেডি ভ্যান্সও শপথ নেবেন। ট্রাম্প, তার স্ত্রী মেলানিয়া এবং ট্রাম্প পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ইউএস এয়ার ফোর্সের একটি উড়োজাহাজ স্থানীয় সময় শনিবার ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে ট্রাম্প পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওয়াশিংটন উপকণ্ঠে অবস্থিত ভার্জিনিয়ায় তার গলফ ক্লাবে যান। গলফ ক্লাবে আতশবাজি পোড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ট্রাম্পের শপথগ্রহণ উত্সব। ট্রাম্প শনিবার ওয়াশিংটন রওয়ানা হওয়ার আগে টেলিফোনে এনবিসি নিউজকে বলেন, সোমবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই তিনি রেকর্ডসংখ্যক নির্বাহী আদেশে সই করবেন। যদিও ঠিক কতগুলো আদেশে সই করবেন, তা এখনো ঠিক করা হয়নি বলে জানান তিনি। তবে সেটি রেকর্ডসংখ্যক হবে। ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সংখ্যাটি ১০০ পার করবে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, সংখ্যাটি অন্তত এমনই হবে। ২০০ মিলিয়ন ডলারের অভিষেক অনুষ্ঠান : অ্যাপলের টিম কুক এর আগে ক্যাপিটল হিলে ৬ জানুয়ারির তাণ্ডবকে লজ্জাজনক দিন বলে উলে্লখ করলেও তিনি ট্রাম্পের অভিযোগের জন্য ১ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কেবল কুক একা নন। আগামী ট্রাম্প প্রশাসনের অনুগ্রহ পেতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রচষ্টোয় ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রেকর্ড ১৭০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছে। উত্সবের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ অর্থের পরিমাণ ২০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে অনেকে আভাস দিয়েছেন। এই তহবিল অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যয়, সেই সঙ্গে প্রাইভেট বলপার্টি এবং কুচকাওয়াজের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ব্যয় করা হবে। গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট এবং মেটা বলেছে যে, তারা ১ মিলিয়ন ডলার করে তহবিল সরবরাহ করবে। সেই সঙ্গে ওপেন আইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানও ১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। অন্যান্য বড় অর্থদাতার মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার, আর্থিক পরিষেবা কোম্পানি ইনটুইট, স্টক-ট্রেডিং অ্যাপ রবিনহুড এবং ফোর্ড ও জেনারেল মোটরসের মতো অটোমোবাইল কোম্পানি। ট্রাম্পের আগের অভিষেকেও রেকর্ড পরিমাণ ১০৬.৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ হয়েছিল। অন্যদিকে বাইডেন ২০২১ সালের অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান হিসাবে মাত্র ৬১.৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন । অতিথি কারা : ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রযুক্তি জগতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব; যেমন- ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস এবং মার্ক জাকারবার্গ। বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। যদিও ২০২০ সালে বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন না ট্রাম্প। অতিথিদের মধ্যে আরও থাকবেন বিল ক্লিনটন, জর্জ ডবি্লউ বুশ, বারাক ওবামাসহ জীবিত সব সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শপথ অনুষ্ঠানে অতিথিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে। তবে শপথ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আমন্ত্রণ পেলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম নেই আমনি্ত্রত অতিথিদের তালিকায়। পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে সেৌজন্যমূলকভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণ থাকে। সাধারণত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। ট্রাম্প অবশ্য প্রচলিত রীতিনীতির ধার ধারেন না। তিনি শপথ অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অতিথিদের তালিকায় ইউরোপের মধ্যমপন্থিদের বাদ দিয়ে অনেক কট্টর ডানপন্থি ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ জানাতে দেখা গেছে। নির্বাহী আদেশ: শপথগ্রহণের প্রথম দিনই ট্রাম্প একাধিক নির্বাহী আদেশে সই করার পরিকল্পনা করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে গণনির্বাসন কর্মসূচি এবং তেল খনন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি। সংগীত পরিবেশন: অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন ক্যারি আন্ডারউড এবং লি গ্রিনউডের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা। এছাড়া Èওয়াই.এম.সি.এ.\' গানে পারফর্ম করবেন ভিলেজ পিপল। গান গাইবেন কিড রক এবং বিলি রে সাইরাসও। গালা ও র‌্যালি : ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার রাতে তিনটি অফিশিয়াল গালায় (বিশেষ অনুষ্ঠান) অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আরও এক ডজনেরও বেশি গালার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া তিনি রোববার সন্ধ্যায় ক্যাপিটাল ওয়ান অ্যারেনায় একটি মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন ভিক্টরি র‌্যালিতে অংশ নেবেন। প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা: ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর থেকেই ফেডারেল সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতে প্রস্তুত। ট্রাম্প ও তার মিত্রদের দাবিকরা ডিপ স্টেট ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনায়ও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে কাজ করা দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই একটি নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন। যার মাধ্যমে ফেডারেল সরকারের প্রায় ৫০ হাজার স্থায়ী কর্মীর চাকরির সুরক্ষা বাতিল করা হবে। এতে এসব পদে স্থায়ী কর্মীদের পরিবর্তনে নিজের পছন্দের ও অনুগত লোকদের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন বিভাগে হাজারো রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনাও করছে। ট্রাম্পের দল এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ ৩ কূটনীতিকের পদত্যাগ চেয়েছে। একে ভবিষ্যতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের মিত্ররা মনে করেন, তার প্রথম মেয়াদে বিচার বিভাগ, শিক্ষা বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল অসহযোগী আমলাদের কারণে। প্রায় এক ডজন শীর্ষ পর্যায়ের নিয়োগপ্রাপ্তদের ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ফেডারেল কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার দায়িত্ব দিয়েছেন। ট্রাম্পের আগের প্রশাসনে অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেটের পরিচালক রাশেল ভাউট শিডিউল এফ আদেশ পুনরায় চালু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়া সার্জিও গোর এবং জেমস শার্ক তার সহযোগী হিসাবে কাজ করবেন। শার্ক ২০২১ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। যেখানে তিনি দাবি করেন, প্রথম মেয়াদে ফেডারেল কর্মচারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্পের নীতিগুলো বাধাগ্রস্ত করেছিলেন।