তুরস্কে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য আটক, মিশরের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ইঙ্গিত


তুরস্কে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য আটক, মিশরের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ইঙ্গিত
তুরস্কে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য থাকার অভিযোগে একজন মিশরীয় নাগরিককে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে বলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে। মোহাম্মদ আবদেলহাফিজ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে তুরস্কে বৈধভাবে বসবাস করছিলেন, সোমবার ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে আফ্রিকা থেকে ব্যবসায়িক সফর শেষে ফেরার সময় আটক হন। মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষিত করা হয়েছে এবং ২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সেখানে এই সংগঠনের ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। সেই সময় থেকে হাজার হাজার মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্য ও সমর্থক মিশর থেকে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তুর্কি সূত্রগুলো মিডল ইস্ট আই-কে জানায়, আবদেলহাফিজের বিরুদ্ধে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৃতীয় কোনো দেশে বিতাড়িত করা হয়েছে। সাধারণত তুরস্ক এমন কাউকে বিতাড়িত করে না যাকে অন্য দেশে পাঠালে তার বিরুদ্ধে নির্যাতন বা মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাবনা থাকে। তবে এই পদক্ষেপ তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে আবদেলহাফিজের বিরুদ্ধে অসাধারণ সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ‘হাসম’ আন্দোলন মিশরীয় কর্তৃপক্ষ আবদেলহাফিজকে ‘হাসম’ আন্দোলনের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করেছে, যা মিশরের দৃষ্টিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি সশস্ত্র শাখা। আবদেলহাফিজের আটক ও বিতাড়ন মিশরের সোমবারের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে তারা বলেছে হাসমের পরিকল্পিত একটি হামলা প্রতিহত করেছে। গত বছর, দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন করার পর তুরস্ক মিশরের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত করে। বর্তমান মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি ২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থান পরিচালনা করেন, যার ফলে দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতা হারান। তারপর থেকে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া অনেক মিশরীয় সমালোচক এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী কঠোর চাপে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মেকামিলীনসহ টিভি চ্যানেলগুলোকে ২০২২ সালে তাদের কার্যক্রম ইউরোপে স্থানান্তর করতে বাধ্য করা। আবদেলহাফিজের আইনজীবী গুলদেন সোনমেজ মিডল ইস্ট আই-কে বলেন, তুরস্কের সিদ্ধান্তে তার ক্লায়েন্টকে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো একটি ভুল পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘তৃতীয় কোনো দেশ থেকে তাকে মিশরে ফেরত পাঠানো সম্ভব, কারণ মিশর বহু আঞ্চলিক দেশের সঙ্গে ফেরতের চুক্তি করেছে।’ এই কারণে আবদেলহাফিজের বর্তমান অবস্থান গোপন রাখা হয়েছে যাতে তাকে আরও বিতাড়িত বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হতে না হয়। তুরস্কে থাকা মিশরীয় নির্বাসিতদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে, যারা বলছেন, সম্প্রতি তুরস্কে মিশরীয় নাগরিকদের উপর দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে যা তুরস্কের অভিবাসী বিরোধী নীতির অংশ। সোনমেজ বলেন, ‘সম্প্রতি মিশরীয় নাগরিকদের আটক এবং বিতাড়নের জন্য স্থায়ী কেন্দ্র স্থাপনের একটি পরিকল্পিত নীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’ সোমবার আল আরবিয়া জানায়, কায়রো ও আনকারার মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে এবং তারা মিশরীয় সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যদের হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা করছে। টিভি চ্যানেলটি বলেছে, মিশর তুরস্ককে একটি নিরাপত্তা ফাইল দিয়েছে যেখানে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যদের নাম রয়েছে, যারা ‘সন্ত্রাসী অপারেশন’ পরিকল্পনা করছে। নেকমেটিন এরবাকান বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গোকহান চিনকারা বলেন, মিশর মুসলিম ব্রাদারহুডের বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে, যা তারা সাম্প্রতিক সময়ে আপসের সময় আপাতত ফেলে রেখেছিল। তিনি মিডল ইস্ট আই-কে বলেন, ‘লিবিয়া, সিরিয়া ও উপসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ হাফতার আপস এই সহযোগিতার একটি বড় অংশ লিবিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। পূর্ব লিবিয়ার অনানুষ্ঠানিক শাসক খলিফা হাফতার, যিনি কায়রোর ঘনিষ্ঠ মিত্র, সম্প্রতি আনকারার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। এই পুনর্মিলনের অংশ হিসেবে, হাফতার লিবিয়ার তোবরুক ভিত্তিক হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের মাধ্যমে তুরস্কের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত চুক্তি অনুমোদনের উদ্যোগ নিয়েছেন। চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বিশেষ করে গ্রিসের বিরুদ্ধে তুরস্কের দাবিকে শক্তিশালী করবে। মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, কায়রো এই চুক্তি অনুমোদনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। চিনকারা আরও বলেন, ‘আবদেলহাফিজ এবং অন্য ছয় জনের ব্যাপারে কী প্রভাব পড়বে তা বলা কঠিন, তবে তুরস্ক স্পষ্টতই কূটনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখতে চায়। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আকা পার্টি তাদের ঐতিহ্যবাহী ভোটারদের বিরক্ত করতে চান না।’ একজন মিশরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ‘দি ন্যাশনাল’-কে জানিয়েছেন, তুরস্ক এখনো উচ্চপদস্থ কয়েকজন মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যকে মিশরের কাছে হস্তান্তর করেনি, যদিও তাদের বিরুদ্ধে মিশরে সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে আনকারা তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণেই সীমাবদ্ধ রেখেছে, তাদের মিশরে হস্তান্তরের পরিবর্তে। মিশরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে উল্লেখিত ইয়াহিয়া মুসা এবং আল্লা আল-সামাহী এখনও তুরস্কে অবস্থান করছে বলে মনে করা হয়।