থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা


থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত শনিবার তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। হতাহতের সংখ্যাও বেড়েছে। এ পর্যন্ত উভয় দেশে অন্তত ৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি বাসিন্দা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পক্ষগুলোকে সংযম প্রদর্শন করে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট আসিয়ানের সভাপতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও সংঘাত থামাতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশ দুটির শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে এক লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলো মন্দির, স্কুল এবং পৌরসভা কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। কম্বোডিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা থেকে ২৩ হাজারের বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সীমান্ত সংঘাত শনিবার তৃতীয় দিনে প্রবেশ করায় আরও কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সংঘর্ষ আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘাতরত উভয় দেশের দাবি, সীমান্ত বিরোধে তারা কেবলই আত্মরক্ষা করছে। তবে তারা যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় বসার জন্য একে অপরকে আহ্বানও জানিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৩ বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ। কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা শনিবার সাংবাদিকদের জানান, নতুন সংঘাতে তাদের আরও সাতজন বেসামরিক নাগরিক এবং পাঁচ সৈন্য নিহত হয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রকেট হামলায় আরও এক কম্বোডীয় নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছিল। মুখপাত্র আরও জানান, হামলায় কমপক্ষে ৫০ কম্বোডীয় বেসামরিক নাগরিক এবং ২০ জনেরও বেশি সৈন্য আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, থাইল্যান্ড গত দুদিনের লড়াইয়ে শিশুসহ ১৩ বেসামরিক নাগরিক ও ছয় সৈন্য নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। কম্বোডিয়ার হামলায় দেশটির ২৯ সেনা ও ৩০ বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন বলেও থাই কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে। শনিবার ভোরে থাইল্যান্ডের উপকূলীয় প্রদেশ ত্রাত ও কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে সংঘর্ষ হয়। গত মে মাসের শেষের দিকে একটি সংঘর্ষে একজন কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে উভয় দেশ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। থাইল্যান্ড সীমান্তের উভয় পাশে সৈন্যদের আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। থাই সীমান্ত প্রদেশ সিসাকেটে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি লোক অবস্থান করছেন। আসিয়ানের সভাপতি দেশ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, তিনি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যাবেন। কম্বোডিয়া আনোয়ারের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, তারাও নীতিগতভাবে এর সঙ্গে একমত। থাইল্যান্ডের দাবি, কম্বোডীয় সেনাবাহিনী সীমান্তের কাছে থাই সেনাদের ওপর নজরদারির জন্য ড্রোন মোতায়েন করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। অন্যদিকে কম্বোডিয়া বলেছে, থাই সেনারা সীমান্তের কাছে একটি খেমার-হিন্দু মন্দিরে হামলা চালালে এই সংঘাত শুরু হয়। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শুক্রবার রাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হয়েছে। এতে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত চার্ডচাই চাইভাইভিড বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে থাই ভূখণ্ডে নতুন করে পুঁতে রাখা স্থল মাইনে সৈন্যরা দুবার করে আহত হয়েছেন। এই দাবি কম্বোডিয়া দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। দেশটির দাবি, বৃহস্পতিবার সকালে কম্বোডিয়া আগে আক্রমণ শুরু করে। চাইভাইভিড কম্বোডিয়াকে অবিলম্বে সব শত্রুতা ও আগ্রাসন বন্ধ করে সৎ বিশ্বাসে সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাইল্যান্ড ইচ্ছাকৃত, বিনা উস্কানিতে এবং বেআইনি সামরিক হামলা শুরু করেছে এবং সীমান্তে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ছিয়া কেও বলেন, নমপেন এই বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। একই সঙ্গে তিনি সংঘাতে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ তোলেন।