দাঁড়ায়ে আছি, আমাকে মার বেটা, মার


দাঁড়ায়ে আছি, আমাকে মার বেটা, মার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন। তখন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান এসে কথা বলার সময় মেজাজ হারান। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি মনে করো, তুমি আর আমি আলাদা পক্ষ, আমি এখানে দাঁড়ায়ে আছি; আমাকে মার বেটা, মার।’উপাচার্যের এমন কথা শুনে মুহূর্তের জন্য হট্টগোল কিছুটা থামলেও পরক্ষণেই আবার শুরু হয়। উপাচার্যের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার সময় বিক্ষোভকারীদের বলতে শোনা যায়, ‘বাংলা একাডেমির সামনে সাম্যকে হত্যার পর খুনিরা কীভাবে পালিয়ে গেল? আপনার প্রক্টরিয়াল টিম তো দোয়েল চত্বরে আছে। তাহলে তারা কেন খুনিদের ধরতে পারেন না?’ হট্টগোলের মধ্যে অনেক কথাই বোঝা যায়নি। তবে সবাইকে থামিয়ে উপাচার্যের ‘আমাকে মার বেটা, মার’ বক্তব্যটি পরিষ্কার শোনা গেছে।শিক্ষার্থীরা তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৎক্ষণাৎ উপাচার্যকে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি দেখার কথা বলেন। এ সময় একজন বিক্ষোভকারীকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার, আপনি তো আমাদেরই লোক।’ তখন উপাচার্য বলেন, ‘তোমাদের পদক্ষেপগুলো বলো।’ পাশ থেকে একজন শিক্ষার্থী বলে ওঠে, ‘আপনি পদত্যাগ করেন।’ উপাচার্যকে ‘আপনি আমাদেরই লোক বলা’ শিক্ষার্থী তখন ক্ষোভ প্রকাশ করেন, ‘আপনারা যদি আমাদেরই লোক হন; তাহলে সাম্যর ঘটনার সময় আমি প্রক্টরকে ফোন দিছি; তিনি ফোন ধরেন নাই কেন?’উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে উচ্চবাচ্যের মধ্যে একজন স্লোগান দিয়ে ওঠে, ‘ব্যর্থ ভিসির বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন।’ এরপর শিক্ষার্থীদের কথামতো তাদের সঙ্গে উদ্যানের দিকে যান উপাচার্য। তখনো হট্টগোল চলছিল। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যকে দেখে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন এবং তার পদত্যাগ দাবি করেন।এদিকে ক্ষুব্ধ আচরণের ব্যাখ্যা দিলেন ভিসি নিজেই। বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি বহু কিছু বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবেসে চাকরিটা করি। আমি এটাকে ব্রত মনে করি। সে জায়গা থেকে আমি শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ সময় ‘তুই’ বলে সম্বোধন করে থাকি। এমনকি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদেরও।ভিসি বলেন, আমি যে কোনো ক্রাইসিসে আমাদের সহকর্মীদের পেয়ে থাকি। যেখানে গতকাল রাতে আমার এক ছাত্র এভাবে মারা গেছে সেখানে তাদের সহপাঠীদের মন খারাপ থাকবে, ক্ষোভ থাকবে। সেটা স্বাভাবিক। তাই আমি প্রথম চেষ্টাতেই তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। আমিতো আনুষ্ঠানিক একটা দপ্তরে বসে থাকার জন্য এখানে আসিনি। সবার আগে পরিচয় আমি একজন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ক্রাইসিস মুহূর্তে তাদের অনুরোধে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। সেই দায়িত্বটা পালন করার চেষ্টা করছি। উল্লেখ্য, ঢাবি শিক্ষার্থী স্যার এএফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ দফা নিরাপত্তা পরিকল্পনা : সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় উদ্যানকে ‘আতঙ্কের স্থান’ থেকে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে সাতটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বুধবার তার ফেসবুক পোস্টে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, উদ্যান এলাকায় অব্যবস্থাপনা ও অপরাধ দমনে সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো-১. রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে; ২. উদ্যানের অভ্যন্তরের সব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ ও মাদক ব্যবসা বন্ধে যৌথ অভিযান চালানো হবে, ৩. এসব কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; ৪. উদ্যানে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সেগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে; ৫. একটি ডেডিকেটেড পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে; ৬. রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে; ৭. রাত ৮টার পর উদ্যান সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ রাখা হবে।এদিকে, সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের এ কমিটিতে আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষসহ একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।