দুবাইয়ে ৫৪৯ বাংলাদেশির সম্পদের খোঁজে দুদক
অনলাইন নিউজ ডেক্স
অর্থ পাচার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে সম্পদ অর্জনকারী ৫৪৯ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিন সদস্যের বিশেষ টিম এই অনুসন্ধান শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দেশটিকে দুবাইয়ে ৩১৫ মিলিয়ন ডলারে মোট ৯৭২টি আবাসনের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ৫৪৯ জন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মূলধন সুইস ব্যাংকসহ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে পাচার করে তা পরবর্তীতে দুবাইয়ে স্থানান্তর করে দেশটিতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের গোল্ডেন ভিসা সুবিধায় দেশটিতে ১৭২টি প্রপার্টি ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধান সংক্রান্ত দুদকের আদেশে বলা হয়, এই অভিযোগটির অনুসন্ধানের তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনের মানিলন্ডারিং শাখার পরিচালককে নিযুক্ত করা হয়েছে।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিমের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. আহসান উদ্দিন ও উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। অভিযোগটির অনুসন্ধান কাজ সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য টিমের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানিলন্ডারিংয়ে মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করার পর দুবাইয়ে গোল্ডেন ভিসার আওতায় প্রপার্টি ক্রয়ের বিষয়ে একটি অভিযোগ আসার পর সেটি যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযোগটি বৃহৎ আকারের হওয়ায় তিন সদ্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিম তাদের অনুসন্দানের স্বার্থে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেবে। টিমের সদস্যরা এরই মধ্যে অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে। অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
দুবাইয়ে ৫৪৯ জন বাংলাদেশির সম্পদ নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাসের হাইকোর্টে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদকসহ চারটি সংস্থার প্রতি আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে দুদক অফিসিয়ালি অভিযোগটি অনুসন্ধান শুরু করেছে। অনুসন্ধানের জন্য আদেশ দেওয়া অন্য তিন সংস্থা হলো, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এসব সংস্থাকে আদেশের এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দুবাইয়ে ৫৫৯ জনের সম্পত্তি কেনার অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না– এ সংক্রান্ত রুলও জারি করেছেন আদালত।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (সিএফএডিএস) গত বছরের মে মাসে তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উপসাগরীয় দেশগুলোতে মূলত পাচার করা অর্থ দিয়ে আবাসন সম্পত্তি কেনার বিষয়টি তুলে ধরেছে। তথ্য লুকিয়ে ৫৪৯ জন বাংলাদেশি দুবাইয়ে ৩১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে মোট ৯৭২টি আবাসন ক্রয়ের বিষয়টিও ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আবাসন খাতের ওইসব সম্পত্তির মধ্যে ৬৪টি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনা ও ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। সেখানে অন্তত একশটি ভিলা ও কমপক্ষে
পাঁচটি ভবনের মালিক প্রবাসী বাংলাদেশি। এর মধ্যে চার-পাঁচজন বাংলাদেশি প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক। ওই প্রতিবেদনে কারও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।