দুয়ার খুলেছে রহমতের মাসের


দুয়ার খুলেছে রহমতের মাসের
গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশের নয়া চাঁদ জানান দিয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের কথা। রমজান অন্য মাসের তুলনায় ফজিলত, বরকত, রহমত ও মাগফিরাতময়। এ মাস আত্মশুদ্ধি, আত্মউন্নয়ন ও তাকওয়া অর্জনের। তাই বিশ্বের মুসলমানগণ প্রতিবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এই মাসের। এই মাস পেলে তারা সাদরে গ্রহণ করেন এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, খোশ আমদেদ মাহে রমজান, আহলান ওয়া সাহলান মাহে রমজান।রমজানের আগমনে মানুষের মাঝে ব্যাপক সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তিতা তৈরি হয়। মানুষের চালচলনে থাকে কোমলতার ছোঁয়া। মানুষ কথাবার্তায় হয় সংযমী। সমাজ ও রাষ্ট্র চিত্রে আসে কল্যাণকর পরিবর্তন। রমজান পালনের সুবিধার্থে বন্ধ রাখা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অফিস আদালতের জন্য নির্ধারণ করা হয় নতুন সময়সূচী। দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য গ্রহণ করা হয় নানা উদ্যোগ। মসজিদগুলো হয় ইবাদত মুখর। মানুষের মাঝে দেখা যায় ভালো কাজের প্রতিযোগিতা। মানুষ বেশি বেশি দান সদকা করে। ফরজের পাশাপাশি মনোযোগী হয় নফল আদায়ে। রমজানের আগমনে এভাবে দেশের সর্বত্র বিরাজ করে এক ধর্মীয় আবহ।রমজানে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ত্যাগ করে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার যন্ত্রণা ভোগ করা হয়। এ যন্ত্রণা মানুষের পাপকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে আত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ করে তোলে। দরিদ্র অনাহারির মত অভুক্ত যন্ত্রণার স্বাদ আস্বাদন করে মানুষ। এতে দরিদ্রের প্রতি দরদ জাগ্রত হয়। শেষ বিচার দিবসের ভয়াবহ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কথা স্মরণ হয়। তাই মুমিন-মুসলমান আত্মশুদ্ধির মাস রমজানের আগমনে ব্যাপক খুশি হন এবং যথাযথভাবে রমজান পালনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন।হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল রমজান মাস। তিনি রজব মাস থেকেই খুব আগ্রহ নিয়ে রমজান মাসের অপেক্ষা করতেন। রমজানের জন্য বিশেষ ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও উদ্বুদ্ধ করতেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন রমজান মাস পাওয়ার জন্য। রমজানের চাঁদ উদিত হলে তিনি অত্যন্ত খুশি হতেন। রমজানের চাঁদকে স্বাগত জানাতেন। সাহাবায়ে কেরামকে রমজানের সুসংবাদ দিতেন।হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের নিকট রমজান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপর আল্লাহতায়ালা এই মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাস আগমনে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত আছে, যা এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে বঞ্চিতই রয়ে যায়। -সুনানে নাসায়ি: ২১১০রমজান মাস শুরু হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আকাশে একজন ঘোষক ঘোষণা দিয়ে বলেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। -ইবনে মাজাহ: ১৬৪২বর্ণিত হাদিসে রমজান মাসকে দুটি কাজের মাধ্যমে স্বাগত জানাতে বলা হয়েছে। তা হলো, যাবতীয় পাপাচার পরিহার করা এবং পূণ্যের কাজে মনোনিবেশ করা।পাপাচার পরিহার করতে না পারলে রোজাপালন অর্থহীন হয়ে যাবে। তাই আমাদের রোজা যেন অর্থহীন ও সওয়াবহীন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ যদি রোজা রেখেও মিথ্যা বলা ও অপকর্ম ত্যাগ না করে, তাহলে তার পানাহার বর্জন করাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। -সুনানে আবু দাউদ ২৩৬২দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জনে রমজানের রোজার যে অপার শক্তি তা স্তিমিত হয়ে যাবে পাপাচার পরিহার না করলে। এজন্য হাদিসে রোজাদার ব্যক্তিকে সতর্ক করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত।রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ রোজাপালন করলে সে যেন পাপাচারে লিপ্ত না হয় এবং মূর্খের মত আচরণ না করে। কেউ তার সাথে ঝগড়া করলে বা তাকে গালমন্দ করলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার। -সুনানে আবু দাউদ: ২৩৬৩রমজান ইবাদতের মাস। পাপ মুছে পুণ্য অর্জনের মাস। মহান আল্লাহ অনেক দয়া করে বরকতময় এই মাস শেষ নবীর উম্মতকে উপহার দিয়েছেন। বরকতময় ওই মাসের দুয়ার খুলেছে। আকাশ থেকে বর্ষিত হচ্ছে অবারিত রহমত। আসুন আমরা সেই রহমত কুড়াই।