দুর্নীতি-দখলে শত কোটি টাকার মালিক মাকসুদ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের আশীর্বাদে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিগত ১৬ বছরে চেয়ারম্যান মাকসুদ ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ ছিল তিন ইউনিয়নবাসীর আতঙ্ক। পিতা-পুত্রের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজির কাছে মুসাপুর ইউনিয়ন, পার্শ্ববর্তী ধামঘর ও মদনপুর ইউনিয়নের মানুষ ছিল জিম্মি। মাকসুদ হোসেনের বাবা হাজী রফিক ছিলেন বন্দরের কুখ্যাত রাজাকার। মাকসুদ নিজে উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ছেলেকে বানাতে চেয়েছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ছেলে শুভ সেভাবে এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালায়। ওসমান পরিবারের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ইউনিয়ন জুড়ে। ড্রেজার লাগিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশের মাটি কেটে বিক্রি, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, কেউ জায়গা ক্রয়-বিক্রি করলে চাঁদা আদায়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বালু ভরাট, ঠিকাদারি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওয়েস্টেজ ব্যবসা, জমি দখল, মাদক ব্যবসাসহ সব কিছুই ছিল চেয়ারম্যান মাকসুদ ও তার ছেলে শুভর নিয়ন্ত্রণে। কেউ তাদের কথা না শুনলে তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে বিচারের নামে করা হতো নির্যাতন।চেয়ারম্যান মাকসুদ এমপি সেলিম ওসমানের আশীর্বাদে ভোট কেন্দ্র দখল করে বার বার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে পুরো এলাকাজুড়ে দুর্নীতি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তার বিরুদ্ধে দুনীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সহযোগিতায় ২০১২ সালে উপ-নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল করে প্রথম মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হন মাকসুদ। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সেলিম ওসামনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার, ২০২১ সালে তৃতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে এখনো তটস্থ এলাকার সাধারণ মানুষ। ভয়ে কেউ তার অপকর্মের কথা বলতে চায় না। স্থানীয়দের দাবি, বর্তমানে মাকসুদ জেলে বন্দি আছে, কিন্তু তার বাহিনীর সদস্যরা বাইরে প্রতিনিয়ত মহড়া দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে শায়েস্তা করবে।স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত সরকারের সময়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ভাই সেলিম ওসমানের সমর্থন থাকায় মাকসুদ ও তার ছেলে শুভ পুরো এলাকাবাসীকে জিম্মি করে। তার বিশাল ক্যাডার বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে মাকসুদ হোসেনের ভাতিজা সম্রাট হোসেন, অন্তর, ভাগিনা মোহন, প্রনয়, নিলয়, বিল্লাল হোসেন, সালাউদ্দিনসহ আরও অনেকে। এই বাহিনীর সদস্যরা বিগত সময়ের মতো এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, বালু ভরাট, জমিজমা বেচেকেনার দালালি, ব্রহ্মপুত্র নদে চলাচলরত বাল্ক হেডে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম। সবশেষ ২০২৪ সালের থার্টিফার্স্ট নাইটে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে শুভ। ২০২৪ সালে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন মাকসুদ। এই নির্বাচন নিয়ে সেলিম ওসমানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।৫ আগস্টের পর শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান আত্মগাপনে চলে যান। আর এই সুযোগে মাকসুদ রাতারাতি নিজেকে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী হিসাবে জাহির করে এলাকা দাবড়ে বেড়ান। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় মাকসুদ ও তার ছেলে শুভসহ ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাকসুদ হোসেনের নেতৃত্বে মুজিবুবর রহমানের বাড়ি, তার নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের বাড়ি, ব্যবসায়ী ওসমান গনি ভূঁইয়ার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, আমিনুল ইসলামের বাড়ি, আব্দুল হকের বাড়িসহ বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালান মাকসুদ। নিরীহ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করেন। যৌথবাহিনী গত ৪ মার্চ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদকে গ্রেফতার করে।বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় কোনো মামলা নেই। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যার চেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে এবং যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে। এই দুটি মামলায় মাকসুদ বর্তমানে কারাগারে বন্দি আছেন।
