নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি ইসি কর্মকর্তাদের মাঠ অফিসে হামলার শঙ্কা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠ কার্যালয়ে হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা করেছেন এ প্রতিষ্ঠানের কয়েক কর্মকর্তা।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তারা বলেন, ওই সময়ে ১৪০টি কার্যালয়ে হামলা হয়। বগুড়ায় নির্বাচন কার্যালয়ে পেট্রোলবোমা মারা হয়। এবারও ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করে তারা মাঠ কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচন কর্মকর্তা ও তাদের কার্যালয়ের নিরাপত্তায় আনসার সদস্য মোতায়েনেরও কথা বলেন।
যদিও আনসার মোতায়েনের প্রস্তাব নাকচ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সুপারকে চিঠি দিতে আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ও সরকারের সশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। এদিনের সভায় রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শনিবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠপর্যায়ের সমস্যা ও প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা হয়।
এতে আগামী নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে অভিজ্ঞদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটের আগে মাঠ কার্যালয়গুলোর শূন্য পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, যেসব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার গাড়ি নেই সেখানে গাড়ি দেওয়া, ব্যালট পেপার ছাড়া নির্বাচনের অন্যান্য সরঞ্জাম নির্দিষ্ট সময়ের আগে জেলা পর্যায়ে পাঠানোসহ বেশকিছু দাবি জানান।
পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা নিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান সিইসি।
এর উত্তরে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকায় না থাকলে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে পোলিং এজেন্টদের তেমন কিছুই করার থাকে না। বরং সব দল অংশ নিলে পোলিং এজেন্টরাই ভোটকেন্দ্রের পাহারাদার হন।
বৈঠকে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথমবার এ মতবিনিময়ের আয়োজন করে ইসি। এতে দেশের ১০টি অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ৬৪ জেলার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অংশ নেন।
বৈঠকে ২০ জন আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বক্তব্য দেন। অপরদিকে কমিশনের পক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও বেগম রাশেদা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
অপর দুই নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত থাকলেও তারা বক্তব্য দেননি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
বৈঠকের শুরুতেই সিইসি বলেন, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হয়, সেজন্য আমাদের প্রয়াসের কোনো ঘাটতি থাকবে না। নির্বাচন আয়োজনে মাঠপর্যায়ের সমস্যা ও করণীয় তুলে ধরতে কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে একজন সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তার বিষয়টি তোলেন।
তার বক্তব্যের রেশ ধরে চারজন আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। যদিও একই বিষয়ে বারবার বক্তব্য না দিতে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম তাগাদা দেন।
ইসির মাঠ কার্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে কয়েকটি দল অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে মাঠ কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও পুলিশ সুপার কার্যালয়গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না।
এবারের নির্বাচন ঘিরে ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। তারা নির্বাচন কার্যালয়ের নিরাপত্তায় আনসার মোতায়েনের দাবি জানান। উত্তরে ইসি সচিব সভায় বলেন, আনসার নিয়োগ প্রক্রিয়াগত বিষয়। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। সিইসি জানান, নির্বাচন কর্মকর্তারা নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিলে কমিশন সচিবালয় ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করবে।
আরও জানা গেছে, নির্বাচনে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনায় এক কর্মকর্তা বলেন, ভোটকক্ষের গোপন বুথের ডিজাইনে পরিবর্তন আনা দরকার। তিনি গোপনকক্ষ ঘেরাওয়ের জন্য ইসির লোগো সংবলিত কালো কাপড় কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহের প্রস্তাব দেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ টেনে আরেক কর্মকর্তা বলেন, গোপনকক্ষে ফোল্ডিং করা যায় এমন পর্দা ব্যবহার করা যেতে পারে।
নির্বাচনি সরঞ্জাম মাঠপর্যায়ে পৌঁছানোর বিষয়ে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ব্যালট পেপার ছাড়া বাকি সরঞ্জামাদি আগেভাগেই পাঠালে সেগুলো বণ্টন করতে সুবিধা হয়। দুর্গম ও চরাঞ্চলের কেন্দ্রের যাতায়াতে দ্রুত যানবাহনের ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।
এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা যথা প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বাবদ সম্মানি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা এবং দুর্গম জেলার ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতির খাতে ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেন।
আরও জানা গেছে, ঘুরেফিরে কর্মকর্তারা নিজেদের দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
তারা জানান, কয়েকটি জেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার গাড়ি চলাচল অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মোটরসাইকেল নেই। নির্বাচনের আগে এসব যানবাহন চান তারা।
ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কমকর্তা নিয়োগের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ইসির কর্মকর্তারা দক্ষতার সঙ্গে বিভিন্ন নির্বাচন পরিচালনা করে আসছে। এ নির্বাচনে তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দিলে তারা আস্থার প্রতিফলন দেবেন।
ইসির কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার দাবি করে কয়েকজন বলেন, অনেক কর্মকর্তা ১৯ বছর চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি পাননি। বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না।
এছাড়া দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা পদ আপগ্রেডশন ও অর্গানোগ্রাম দ্রুত অনুমোদনের দাবি জানান। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতো মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও নির্বাচনে অতিরিক্ত খাটুনি বাবদ পারিশ্রমিক দেওয়ার প্রস্তাব দেন তারা।
কমিশন থেকে যে বার্তা দেওয়া হলো: বৈঠকের শুরুতেই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের জনপ্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় কিভাবে সুদৃঢ় এবং সহজ হবে সেটা বের করে নির্বাচনের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচনের ফলাফল উঠে আসবে, আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
বৈঠকে তিনি জানান, আমার মনের বাসনা ও ইচ্ছা হচ্ছে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। ওই নির্বাচনে অধিক সংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করুক।
বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা চাই সুন্দর ও অবাধ নির্বাচন হোক। নির্বাচন বিতর্কিত হোক তা চাই না।
সভা শেষে ইসির মিডিয়া সেন্টারে বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি বলেন, এটা মূলত প্রাথমিক সভা। নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে, কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্রের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের সুনির্দিষ্ট সমস্যা আছে কিনা, একেক অঞ্চলে একেক সমস্যা থাকতে পারে-সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যেমন পার্বত্য অঞ্চলে কিছু কেন্দ্র আছে। এরকম সব জায়গায় কিছু কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা আছে, তা অবহিত হয়েছে কমিশন। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে ইসিতে জানানোর জন্য বলা হয়েছে। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাসহ সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, মাঠ কর্মকর্তারা কোনো ঘাটতির কথা উল্লেখ করেননি। নির্বাচনি আচরণবিধি যাতে সবাই মেনে চলেন, এজন্য তারা সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। এই বিষয়েই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা সংক্রান্ত কোনো আলোচনা এই বৈঠকে হয়নি জানিয়ে অশোক কুমার বলেন, তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ বা সংকটের কথা তারা বলেননি। মাঠের পরিবেশ এখনও ভালো আছে।
বৈঠকে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতার কথা বলেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সবার সহযোগিতা নিয়ে তাদের কাজ করতে হবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলো প্রশাসনিক। কোনো রাজনৈতিক সমস্যার কথা তারা বলেননি।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।