পরিবেশ নিশ্চিত করুন


পরিবেশ নিশ্চিত করুন
গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে দেশের শিল্প খাত। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রয়েছে ডলার সংকট। কমছে ঋণপত্র খোলা এবং নিষ্পত্তির হার। কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েক শ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ধুঁকছে অনেক কারখানা। অনেক কারখানা নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। ফলে বাড়ছে শ্রম অসন্তোষ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অনুকূল নয়। সামগ্রিকভাবেই শিল্প খাতের পরিবেশের অবনতি হচ্ছে। এসব কারণে দেশীয় উদ্যোগ যেমন কমছে, তেমনি কমছে বিদেশি বিনিয়োগ। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে দেশের ইপিজেডগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২২.৩৩ শতাংশ। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেপজা। ইপিজেডের বাইরে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সার্বিকভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে ৭১ শতাংশ। দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৯ কোটি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে কর্মক্ষম জনসংখ্যা। আর তাদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশে দ্রুত শিল্পায়ন প্রয়োজন, কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। বিদ্যমান শিল্পগুলোও ধুঁকতে ধুঁকতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে এ দেশের দ্রুত বর্ধিষ্ণু কর্মক্ষম জনসংখ্যার কর্মসংস্থান হবে কিভাবে? জানা যায়, এরই মধ্যে শিল্প খাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টগুলোয় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা চলছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৫০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম করা হতে পারে ৭৫ টাকা। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এই প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে। ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে তার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। গত সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে এক চিঠিতে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চার ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিটিএলএমইএ চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ। ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে শিল্পঘন এলাকাগুলোতে, বিশেষ করে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারে অবস্থিত কারখানাগুলোয় গ্যাসসংকটের কারণে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে কারখানাগুলোর প্রডাকশন শিডিউল ও সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তদুপরি পোশাক খাতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে শিল্পে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে, রপ্তানির নির্দিষ্ট সময় ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি, শিল্প খাতে উৎপাদন ও আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। শিল্পের সহায়ক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।