প্রতিমন্ত্রীর নামে খাসজমি


সরকারি খাসজমি দলিল করে মালিকানা নিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপিসহ চারজন। প্রায় ২৬ বছর আগে চাঞ্চল্যকর এ দলিল সম্পাদনের পর জমি নিজেদের নামে নামজারিও করে নিয়েছেন। দিচ্ছেন খাজনাও। অথচ আলোচ্য দলিলে যে দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করে বিক্রি দেখানো হয়েছে, এর প্রায় অর্ধেক জমিই পর্যটন করপোরেশন খাস সম্পত্তি হিসাবে অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। আর বাস্তবে জমি না থাকলেও গোপনে দলিল করা হয়েছে ডিসির খতিয়ানে থাকা এই জমি। এমনকি আলোচ্য দলিলের একটি দাগে ৪২ শতক জমির কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা উপকূলে।তথ্যানুসন্ধান বলছে, আলোচিত ওই দলিলে উল্লেখ করা ২ একরের মধ্যে এক একর ২০ শতক জমির তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। ভূমি কর্মকর্তারা বলেছেন, সঠিক তদন্ত হলে এ দলিল বাতিল হয়ে যাবে।তাহলে এ জমির দলিল হলো কীভাবে-জানতে চাইলে কলাপাড়া ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানের দলিল নিয়েই রাষ্ট্রীয় তদন্ত হওয়া উচিত। কীভাবে দলিলদাতা জমির মালিক হয়েছেন, তা তদন্ত হলেই আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে দলিল হওয়ার পর ২০১২ সালে জমির নামজারি করেন মহিববুর রহমানসহ দলিল গ্রহীতারা। এই ১৫ বছরেও জমিটির নামজারি না হওয়ার কারণও খুঁজতে হবে। এরপর সংসদ-সদস্য হওয়ার পর ২০১৮ সালে মহিববুর রহমান জমি দখল করে নেন। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে দেওয়া ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ডিও লেটারের তথ্য তালাশ করতে গিয়ে তিন মাসের অনুসন্ধানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ডিও লেটারে কুয়াকাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রেস্টহাউজের অভ্যন্তরে ৮ শতক জমি নিজের দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী। অথচ সংশ্লিষ্ট জমি পাউবোর অধিগ্রহণকৃত। যেখানে প্রতি শতক জমির দাম কোটি টাকারও বেশি। এমনকি পাউবোর রেস্টহাউজের সীমানায় ঢুকে নিজের জমি দাবি করে ৫টি পিলারও স্থাপন করেছিলেন তিনি। তখন তিনি স্থানীয় সংসদ-সদস্য। আর প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথের ১৫ দিনের মাথায় ১নং খাস খতিয়ানের জমি নিজের দাবি করে ডিও দেন। ডিও লেটারে জমির মালিকানার বিষয়ে নিজের পক্ষে শক্ত অবস্থান তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী পাউবোর চলমান মামলা নিষ্পত্তি চেয়েছেন। অথচ এ জমি ১৯৬৮ সালে অধিগ্রহণ করে পাউবো।নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পাউবো পটুয়াখালীর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানসহ দুজনের বিরুদ্ধে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন। তখন তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেন, ‘আমার কেনা দাগে সরকারের খাস খতিয়ানের কোনো জমি নেই। একই দলিলে অপর আরও দুজন আছেন। তাদের একজন কুতুবউদ্দিন তালুকদার, অপরজন আনিছুর রহমান। এ দুজনের জমি পর্যটন করপোরেশন অধিগ্রহণ করেছে।ব্যক্তিমালিকানা জমি অধিগ্রহণের আওতায় নেওয়া হলে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। এ দুজন ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে পাউবোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। জমির চৌহদ্দি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মামাতো ভাই মাহবুবুর রহমান তালুকদার (সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার পাউবোকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছিলেন। সেই মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এ মামলাটিই নিষ্পত্তি করতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছি।এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এক দলিলে চারজনের নামে দুই একর জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতক জমি আমার। তিনজনের নামে এক একর ২০ শতক। চৌহদ্দি অনুযায়ী জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সব পক্ষের উপস্থিতিতে জমি মেপে আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোচ্য দলিলের যেসব দাগ থেকে সড়ক ও জনপথ, পাউবো এবং পর্যটন করপোরেশন যে পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করে তার ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। কারণ, ডিসি অফিসের এলএ শাখা তদন্ত করে জানতে পারে জমি ডিসির ১নং খাস খাতিয়ানের। যে কারণে কোনো ব্যক্তির এ জমির মালিকানা দাবি করার সুযোগ নেই।ডিসির খতিয়ানের জমি দলিল যেভাবে : ১৯৯৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দলিলটি সম্পন্ন হয় কলাপাড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে। ২ একর জমি দলিল করে দেন প্লেসিং মগনি নামে একজন। আলোচ্য দলিলে এই নারীকে সেফরি মগের একমাত্র মেয়ে হিসাবে দেখানো হয়েছে। ৩৪নং জেএলভুক্ত লতাচাপলী মৌজার এসএ ৫৩৪৮, ৫৩৪৯ এবং ৫৪৮৪নং দাগ থেকে মোট ২ একর (২শ শতক) জমি ৪ জনের নামে রেজিস্ট্রি হয়। দলিল গ্রহীতারা হলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপি, মো. কুতুব উদ্দিন তালুকদার, মো. আব্দুর রশীদ হাওলাদার ও আনিসুর রহমান। এর মধ্যে মহিববুর রহমানের নামে ৮০ শতক। বাকি ৩ জন ৪০ শতক করে এক একর ২০ শতকের নামজারিও পেয়েছেন।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ৫৩৪৮নং দাগে মোট জমির পরিমাণ ৬ একর ৯৫ শতক। এই দাগ থেকে দলিলে উল্লেখ করা হয় ৭০ শতক। ৫৩৪৯নং দাগে জমি আছে ২ একর ১৮ শতক। এই দাগ থেকে পর্যটন করপোরেশন দুই দফায় জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে এক একর ৫৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করে। একই দাগ থেকে সড়ক ও জনপথ নিয়েছে ৪ শতক। সরকারিভাবে ১ একর ৫৯ শতক অধিগ্রহণের পর এই দাগে জমি থাকার কথা ৫৯ শতক। অথচ এই দাগ থেকেই মন্ত্রীর দলিলে ১ একর (১০০ শতক) জমি বিক্রি দেখানো হয়। এছাড়াও ৫৪৮৪নং দাগে মোট জমি ৬৪ শতক। এই দাগ থেকে একই দলিলে ৩০ শতক জমি দেওয়া হয়। একই দাগ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ করে ২৬ শতক। সড়ক ও জনপথ নিয়েছে ৯ শতক। অবশিষ্ট জমি থাকার কথা ২৯ শতক। অথচ এ দলিলে ৫৪৮৪নং দাগ থেকে দেওয়া হয় ৩০ শতক। ওই ২৯ শতক জমি দখলের পর পাউবোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ২৬ শতকের মধ্যে ১১ শতক জমি ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী (৮ শতক) ও আব্দুর রশীদ (৩ শতক) জমি দিয়ারা জরিপে রেকর্ড করে নেন। মূলত এই জমি নিয়েই পাউবোর সঙ্গে সরাসরি বিরোধে জড়িয়ে পড়েন মহিববুর রহমান। যে কারণে আদালতে গিয়ে প্রতিকার চায় পাউবো।এদিকে চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে, প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান ও আব্দুর রশীদ সরাসরি জমির ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে প্রকাশ্যে এলেও দলিল গ্রহীতা কুতুব উদ্দিন ও আনিসুর রহমানের কোনো জমি সরেজমিন পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথাও নেই। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায় ভয়াবহ তথ্য। দলিলের চৌহদ্দি অনুযায়ী এই দুজনের নামে থাকা ৮০ শতক জমি পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়। পর্যটন করপোরেশন কার কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করেছে জানতে যোগাযোগ করা হয় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। তথ্য অধিকার আইনে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এলএ কেস নং ২৩/২০০৫-০৬ অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে ১ একর ৯০ শতক জমির মালিক জেলা প্রশাসক। অর্থাৎ সম্পূর্ণ জমিই ডিসির খতিয়ানভুক্ত। এ কারণে কুতুব উদ্দিন এবং আনিসুর রহমানের জমি অধিগ্রহণের আওতায় চলে যাওয়ায় তারা কোনো ক্ষতিপূরণও পাননি। কারণ, ডিসির রেকর্ড রুমে এই জমির প্রকৃত মালিক জেলা প্রশাসক।পাউবোর মামলায় যা আছে : পাউবোর অভিযোগে বলা হয়, ‘কুয়াকাটার লতাচাপলী মৌজায় দিয়ারা ১২৫৯/১২৫৮ খতিয়ানে ৮টি দাগে ১১ শতক জমি নিয়ে বিরোধ। ‘ক’ তফশিল বর্ণিত এই জমি পাউবোর দখলে। ১ ও ২নং বিবাদীর (মো. মহিববুর রহমান ও আব্দুর রশীদ হাওলাদার) নামে দিয়ারা রেকর্ড দেওয়া সম্পূর্ণ অন্যায়। কারণ, এ জমি খাস খতিয়ানের সম্পত্তি, ‘ক’ তফশিলভুক্ত। ব্যক্তিমালিকানায় এ জমি রেকর্ডের কোনো সুযোগ নেই। একই সীমানা প্রাচীরের মধ্যে ১১ শতকসহ মোট ৭৩ শতক জমি পাউবো ভোগদখল করছে।এজাহারে বলা হয়, ‘প্রকৃত স্বত্ব বিবেচনায় বিএস রেকর্ডে ১১ শতক জমি দিয়ারা জরিপে পাউবোর নামে রেকর্ড হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মো. মহিববুর রহমান ও আব্দুর রশীদ অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেছেন। জরিপ কর্মচারীদের ‘অবৈধভাবে’ বাধ্য করে নিজেদের নামে হাল রেকর্ড নিয়েছেন। এরপর এই রেকর্ড গোপন রাখা হয়। ভুল এই রেকর্ড সম্পর্কে পাউবো অবগত ছিল না।’এজাহারের আরেক স্থানে বলা হয়, ‘২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল ১নং বিবাদী মো. মহিববুর রহমান পাউবোর রাজস্ব সার্ভেয়ার তারিকুল ইসলামের কাছে ভুল রেকর্ড বাস্তবায়নের উদ্যোগের কথা জানান। এরপরই ভুল রেকর্ডের বিষয়টি পাউবোর নজরে আসে। পরে রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়ের করা হয়।’জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুয়াকাটার ওই আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন মো. মহিববুর রহমান। এরপর ৭ দিনের মাথায় খাস খতিয়ানের ওই জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। পরবর্তী সময়ে পাউবো এই দখলের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করে। ২০১৯ সালের ১৯ মে মো. মহিববুর রহমানসহ দুজনকে ২০১৮ সালের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি দখল ও নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন আদালত। এই নির্দেশ অমান্য করেই ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অনধিকার প্রবেশ করে পাউবোর জমিতে মো. মহিববুর রহমান ৫টি পিলার স্থাপন করেন। এ অবস্থায় তাদের অবস্থান ধরে রাখতে মো. মহিববুর রহমানসহ দুজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর পটুয়াখালীর যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে ‘আদালত অবমাননা’ মামলা করে পাউবো।এদিকে স্থিতাবস্থা বহাল রাখার আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। শুনানি শেষে আপিল গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর পাউবোর বিরুদ্ধে রায় ও আদেশ প্রদান করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে পাউবো হাইকোর্টে রিট করে। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাউবোর পক্ষে রায় ও আদেশ প্রদান করা হয়। এভাবে পালটাপালটি আপিল দায়েরের পর পাউবোর রেকর্ড সংশোধনের মামলা নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেন হাউকোর্ট। এ অবস্থার মধ্যেই প্রতিমন্ত্রীর নজিরবিহীন এই ডিও লেটার দেওয়া হয়।এদিকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানের ডিও লেটারে উত্থাপিত দাবিদাওয়া মেটাতে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কাছে দাপ্তরিক পত্র দিয়েছেন। এ বিষয়ে ৬ মার্চ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাসরিন আলম সাথী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান কুয়াকাটা মৌজায় জমির সীমানা নিয়ে পাউবোর মতভেদের সমাধানের অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে ডিও পত্রের ওপর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘প্রতিমন্ত্রীর লিখিত নির্দেশনা’র আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ডিও : কলাপাড়ার লতাচাপলী মৌজার সিএস-২৬৩, আর এস-৭২১, এসএ-১১৬০নং খতিয়ানে বংশপরম্পরায় জমির মালিক পেচিং মগ। তার কাছ থেকে সাফ কবলা দলিলে ৮০ শতক জমির মালিক তিনি। ১৯৯৭ সালে ৯ ডিসেম্বর ৩০৫০নং দলিলে ১১টি দাগে এই জমির খাজনা, পৌর করসহ পরিশোধ করেছেন। ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল নিজের নামে নামজারিও সম্পন্ন হয়েছে।ডিও লেটারে বলা হয়, এল. এ. (ডব্লিউ) ৩৪/৬৮-৬৯নং কেসের আওতায় ৭৩ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে পাউবো। বাস্তবে পাউবো ‘ধানসিঁড়ি’ নামে ‘রেস্টহাউজ’ তৈরি করে ৭৩ শতাংশেরও অধিক জমি ভোগদখলে রয়েছে। বিএস জরিপ অনুযায়ী প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানের ভোগদখলে থাকা ৬টি দাগে মোট ৮ শতক জমি পাউবো দাবি করায় মতভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কাছে জমি মেপে বুঝিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান তিনি। জেলা প্রশাসক এলএ শাখা, পাউবো, সওজ ও কলাপাড়ার ভূমি অফিসকে পত্র দিয়ে তার সীমানায় কোনো অবৈধ দখল নেই বলে জানানো হয়। কলাপাড়ার ইউএনও ও এসি ল্যান্ড সরেজমিনে উপস্থিত থেকে জমি মেপে বুঝিয়ে দেন। সেখানে সীমানা পিলারও দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত একটি মিস আপিলের দেওয়া রায়ে উভয় পক্ষের জমি সার্ভেয়ার দ্বারা মেপে ভোগদখল করতে পারবেন মর্মে আদেশ দিয়ে আপিলটি নিষ্পত্তি করেন।জানতে চাইলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, ‘ডিসির খাস সম্পত্তি দলিল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি হয়ে থাকে, সেটি বাতিলের উদ্যোগ নিতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নামে পাউবোর যে জমি রেকর্ড হয়েছে, তা ভুল ছিল। আবার পাউবোর অধিগ্রহণ করা জমিও জেলা প্রশাসকের নামে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেটাও ভুল। বিষয়টি সরেজমিন মেপে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।