প্রভু প্রেমের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল। যে ব্যক্তি এ সময়টাকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে তার জীবন হয় আনন্দঘন ও বরকতময়। তাই এ সময় নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে হয়। আজকের মুসলিম যুবসমাজ ইসলামের সেই মহান আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহকে ছেড়ে মুসলিম কৃষ্টি-কালচারের পরিপন্থি এমন সব বিজাতীয় সংস্কৃতির দিয়ে নিজেদের চরিত্রকে প্রভাবিত করছে। ফলে তারা আত্মার সৌন্দর্য হারিয়ে বহু পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। ভালো-মন্দের সংমিশ্রণকেও তারা ইবাদত হিসাবে মনে করছে।যৌবন হলো জীবনের সেই সময়, যখন একজন যুবককে হাজারও অন্যায় হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকবে। অনেকে দুনিয়ার এ আসক্তি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। জেনা-ব্যভিচারের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আবার অনেকে অন্যায় করার শক্তি থাকার পরও অন্যায় করে না। কারণ সে আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমপর্ণ করেছে। পবিত্র কুরআনে যেহেতু আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘অবশ্যই সফল হয়েছে মুমিনগণ... আর যারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত- ৫)। আর এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (তথা জিহ্বা) ও দুই ঊরুর মধ্যবর্তী স্থান (তথা লজ্জাস্থানের) জামানত আমাকে দেবে, আমি (মুহাম্মদ সা.) তার জান্নাতের জিম্মাদার।’ (বুখারি, হাদিস- ৬৪৭৪)।যৌবনকে কোনোভাবে হেলায় হারানো যাবে না। চরিত্রকেও ধ্বংস করা যাবে না। বার্ধক্য আসার আগে এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। একজন অসুস্থ মানুষই বুঝতে পারে সুস্থতা আল্লাহর কত বড় নেয়ামত! এ কারণে একজন যুবক যদি দৃঢ় সংকল্পে থেকে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, জীবিকা নির্বাহে তার উত্তম সময়গুলো ব্যয় করে, আল্লাহ তার থেকে অভাবকে দূরে সরিয়ে নেন। এ কারণে আল্লাহর দেওয়া সময় নামক সুন্দর নেয়ামতকে কাজে লাগিয়ে হায়াতে বরকত অর্জন করতে হবে।যৌবন হলো মেহমান। যে ক্ষণিকের জন্য আপনার বাড়িতে এসেছে, সময় হলে আবার চলেও যাবে। আপনার বিদায় দেওয়ার জন্যও সে অপেক্ষা করবে না। তাই সঠিকভাবে এর ব্যবহার করতে হবে। নফসের অনুগত হলে চলবে না। তাহলে সে আপনার সমূহ ক্ষতি করে চলে যাবে। এ সময়ে সে আপনাকে দিয়ে কিছু পাপের কাজ করিয়ে নিতে চাইবে, যাতে আপনি জাহান্নামের নিকটবর্তী হয়ে যান। আপনি যদি আল্লাহর সঠিক বান্দা হয়ে থাকেন, যৌবনের এ বিধ্বংসী খেলায় কখনোই মেতে উঠবেন না। তার কাছে অনুগত্যও স্বীকার করবেন না। বরং যৌবনই আপনার পদানত হবে। আপনার নির্দেশ মেনেই সে সব ধরনের ভালো কাজ করবে। যে কাজগুলোতে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে।বুদ্ধিমান সে যে তার যৌবনকে কাজে লাগায়। এ সময়কে যদি আপনি কাজে না লাগান যখন আপনাকে বার্ধক্য, জরা-খরা পেয়ে বসবে আপনার আফসোসের শেষ থাকবে না। এ কারণে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি সওয়ালের জওয়াব দেওয়া ছাড়া কোনো আদম সন্তান আল্লাহর সম্মুখ হতে এক কদমও নড়তে পারবে না। সে তার জীবনকে কোথায় ব্যয় করেছে। যৌবনকে কোথায় ক্ষয় করেছে, সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে আর কীভাবে ব্যয় করছে। যা জেনেছে, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করছে।’ (তিরমিযি, হাদিস-২৪১৬)।যৌবনকালের ভালো আমলগুলো আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। এ সময় যারা নিজের নফসের সঙ্গে জিহাদ করে মন্দ থেকে ফিরে থাকতে পারে, তারাই সত্যিকারের মানুষ। কারণ, তারা আল্লাহকে ভালোবাসে। একমাত্র তার ভালোবাসায় পৃথিবীর সব লোভনীয় ও মোহনীয় কার্য থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। পার্থিব সব অবৈধ জিনিসের আকর্ষণ ছিন্ন করে অন্তরে আল্লাহর মহব্বতকে স্থান দেয়। সেই কিয়ামতের ময়দানে যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না-আল্লাহ সেদিন স্বীয় ছায়ার তলে তাদের আশ্রয় দেবেন।নসিহত হিসাবে হাফসা বিনতে সীরিন (রহ.) বলেন, ‘হে যুবক শ্রেণির মানুষ, তোমরা কর্ম কর, কারণ যৌবনকালই হলো কাজ করার উপযুক্ত সময়।’ আহনাফ ইবনে কাইস (রহ.) বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি যৌবনকালে নেতা হতে না পারে, সে বুড়োকালেও নেতা হতে পারবে না। আপনার শক্তি ও সাহসকে এমন কাজে বিনিয়োগ করুন, যে কাজে আল্লাহর রহমত অনিবার্য। আপনি মরে গেলেও সে কাজের বিনিময় প্রবহমান থাকবে। তাই যৌবনকালে যেমন ভালো কাজ করবেন তেমনি মন্দ কাজ থেকেও মানুষকে ফেরাবেন। ভালো কাজ যেমন একটি ইবাদত তেমনি মন্দ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখাও ইবাদত।
