ফাঁকিবাজ ও পেছনের বেঞ্চের যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, দেখে নিন
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বিশ্ববিখ্যাত নোবেলজয়ীদের অনেকেরই শৈশব বা শিক্ষাজীবনের শুরুটা ছিল চেনা ছকের বাইরে। কেউ ছিলেন ক্লাস ফাঁকানোয় ‘মাস্টার’, কেউ আবার স্কুল থেকেই বহিষ্কৃত। এমনকি কেউ কেউ ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিলেন অনিশ্চয়তায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের অর্জনই বদলে দিয়েছে ইতিহাসের ধারা।
নোবেলজয়ীদের তালিকায় অন্যতম প্রভাবশালী বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। পদার্থবিজ্ঞানে ১৯২১ সালের নোবেল পুরস্কারজয়ী এই বিজ্ঞানী তরুণ বয়সে কিন্তু ছিলেন সাধারণ মানের ছাত্র। তিনি জুরিখ পলিটেকনিক স্কুলে (বর্তমানে ETH Zurich) পড়ার সময় নিয়মিত ক্লাসে না গিয়ে শুধুমাত্র পদার্থবিদ্যায় মনোযোগ দিতেন। ১৯০০ সালে স্নাতক পরীক্ষায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন নম্বর পেয়ে পাস করেন তিনি। তাঁর সহপাঠীরা যেখানে স্নাতক শেষে গবেষণা সহকারী হওয়ার প্রস্তাব পান, সেখানে আইনস্টাইন ছিলেন একমাত্র যিনি সে সুযোগ পাননি।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালে রসায়নে নোবেল পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ফ্রান্সেস আর্নল্ড শৈশবে ছিলেন দুষ্টু ও অস্থির প্রকৃতির। ষাট-সত্তরের দশকে তাঁর পড়াশোনার শুরুর দিকটা ছিল চ্যালেঞ্জে ভরা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম দুষ্টু, সহজে ক্লাসে মন বসত না। পড়াশোনার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকতাম, তাই শিক্ষকেরা আমাকে ক্লাস সাজানোর মতো বাড়তি কাজ দিতেন।’
ফ্রান্সেস আর্নল্ডও মাত্র ১০ বছর বয়সে জ্যামিতির মতো বিষয়ে হাইস্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পান। প্রথমে বিষয়গুলো উপভোগ করলেও কিশোর বয়সে গিয়ে স্কুল তাঁর কাছে একঘেয়ে হয়ে ওঠে। একসময় তিনি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন, এমনকি বহিষ্কৃতও হন। তিনি বলেন, ‘আমার আগ্রহ ছিল না। যা জানতে চাইতাম, নিজের মতো বই পড়ে শিখতাম। ক্লাসে না গিয়েও পরীক্ষা পাস করে যেতাম।’
এখন বয়স ৬৯, আর্নল্ড স্বীকার করেন তাঁর পথ অন্যদের জন্য অনুসরণের মতো নয়। তবে তাঁর মতে—স্কুলগুলোতে আরও নমনীয়তা থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘যেসব শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা দরকার, তা নিশ্চিত করা স্কুলগুলোর সামর্থ্যে নেই।’
২০২১ সালে অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী ডেভিড কার্ডও পড়াশোনার শুরু করেছিলেন ভিন্ন পথে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির পিএইচডি প্রোগ্রামে যারা আসে, তাদের মধ্যে আমার মতো কেউ নেই। আমি তো গ্রামীণ স্কুলে পড়েছি।’ পঞ্চাশের দশকে কানাডার এক খামারে জন্ম নেওয়া কার্ড পড়তেন ছোট্ট একটি স্কুলে, যেখানে একজন শিক্ষক প্রায় ৩০ জন ছাত্রকে একসঙ্গে পড়াতেন। কার্ড বলেন, ‘আমি আমার শ্রেণির বাইরের পড়াতেও মনোযোগ দিতাম। এতে করে দ্রুত অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারতাম।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, যাদের বাড়তি মনোযোগের দরকার, সেই শিক্ষার্থীদের জন্য এ ব্যবস্থা ভালো ছিল না।
নোবেল ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, আরও অনেক বিজয়ী শুরুতে শিক্ষাগত বাধার মুখোমুখি হয়েছিলেন। অর্থনীতিতে প্রথম নারী নোবেল বিজয়ী এলিনর অস্ট্রোম পিএইচডি করার সুযোগ পাননি। ২০০৯ সালের চিকিৎসায় নোবেল জয়ী ক্যারোল গ্রেইডার শিশু বয়সে ডিসলেক্সিয়ায় ভুগতেন। আবার ২০১৫ সালের রসায়ন নোবেল বিজয়ী টোমাস লিন্ডাহল স্কুলে পড়ার সময় রসায়নেই ফেল করেছিলেন।
আর্নল্ড ও কার্ড—দুজনেই ছোটবেলা থেকেই অর্থোপার্জনের জন্য কাজ করেছেন। তাঁদের মতে, সেটি জীবনের বড় অভিজ্ঞতা। আর্নল্ড কিশোর বয়সে ওয়েট্রেস, রিসেপশনিস্ট এমনকি ট্যাক্সিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কাজ করলে বোঝা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কতটা মূল্যবান। এটা আপনাকে এমন একটি পেশার পথে নিয়ে যেতে পারে, যা হয়তো সারা জীবন চালিয়ে যেতে চান। একই সঙ্গে সময় ব্যবস্থাপনাও শেখায়।’
কার্ডও খুব ছোটবেলা থেকেই খামারের কাজে বাবাকে সাহায্য করতেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে তেমন হোমওয়ার্ক থাকত না। তাই কাজ করার সময় পেতাম। আমি ১১ বছর বয়সে ট্রাক্টর চালাতে শিখেছি। প্রতিদিন ভোরে উঠে বাবার সঙ্গে গরু দোহাতাম। তারপর গোসল করে স্কুলে যেতাম।’
তাঁরা দুজনেই পড়াশোনার শুরুতে ভিন্ন বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছিলেন। আর্নল্ড প্রথমে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও অ্যারোনটিকসে পড়েন। পরে ঝোঁকেন রসায়নে। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না জীবনে কী করতে চাই। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নিয়েছিলাম, কারণ এতে সবচেয়ে কম শর্ত ছিল।’
অন্যদিকে, কার্ড প্রথমে পদার্থবিদ্যা পড়তে শুরু করলেও পরে অর্থনীতিতে চলে আসেন। অবশেষে ভিন্ন ভিন্ন পথ ঘুরে তারা পৌঁছেছেন অসাধারণ সাফল্যে। তাই বিষয় যাই হোক মেধা থাকলে তা আপনাকে চিনিয়ে দেবে বিশ্বের কাছে।
তথ্যসূত্র: এএফপি
