ফিলিপাইনে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে এআই ও ভুয়া তথ্য
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তেকে মার্চে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেফতার করে, তখন তার মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত ভাইয়ের ন্যায়বিচারের দাবিতে স্থানীয় টেলিভিশনে কথা বলেছিলেন শীরাহ এসকুয়ের্দো।কিন্তু কয়েকদিন পরই ফেসবুকে ভাইরাল হয় একটি এআই-উৎপাদিত ভিডিও, যেখানে দেখা যায় এসকুয়ের্দোর নিহত ভাই এফ্রাইম বেঁচে আছেন এবং বোনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলছেন। ভিডিওটিতে কম্পিউটার-উৎপাদিত এফ্রাইমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বেঁচে আছি, মরিনি। তোমাকে কি এর জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে?’দুতার্তের অনুসারী এক ইনফ্লুয়েন্সার এই ভিডিও পোস্ট করার পর তা হাজার হাজার দর্শক পায় এবং ‘ভুয়া মাদকযুদ্ধের শিকার’ বলে মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে এসকুয়ের্দো প্রতিদিন ঘৃণামূলক বার্তার শিকার হচ্ছেন।তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন শত শত নোটিফিকেশন আর ঘৃণার বার্তা নিয়ে ঘুম থেকে উঠি। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, অনেকেই এগুলো সত্যি বলে বিশ্বাস করছে।’রাজনৈতিক বিভাজন ও ডিজিটাল প্রপাগান্ডামার্চে দুতার্তের গ্রেফতারি ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সঙ্গে তার তিক্ত ক্ষমতার লড়াইয়ের মধ্যে ঘটে। উভয় পক্ষের সমর্থকরা এখন ডিজিটাল মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও বিকৃত ছবি ছাড়াও এই প্রচারণায় এআই-উৎপাদিত কনটেন্টের ব্যবহার বেড়েছে।মার্কোস জুনিয়র ও দুতার্তে পরিবার অতীতে ভুয়া তথ্যের প্রচার কৌশল ব্যবহার করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে দুতার্তে পক্ষের ভূমিকা বেশি।ম্যাস মিডিয়া বিশেষজ্ঞ দানিলো আরাও বলেন, ‘দুতার্তে পরিবার তাদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠন করতে চাইছে, আর এর জন্য তারা তথ্য বিকৃত করতে পিছু হটবে না।’ভুয়া ভিডিও ও জনমতসম্প্রতি দুতার্তে পরিবারের পক্ষে তৈরি করা এআই-ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। জুনে দুতার্তে-ঘনিষ্ঠ এক সিনেটর ৮.৬ মিলিয়ন ভিউ পাওয়া একটি এআই ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে ডেপুটি-প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তের বিরুদ্ধে ‘নির্বাচিত বিচার’ নিয়ে সমালোচনার জবাব দেওয়া হয়।ডেপুটি-প্রেসিডেন্ট এ ভিডিওকে সমর্থন করে বলেন, ‘লাভের উদ্দেশ্যে না হলে এমন ভিডিও শেয়ার করতে কোনো সমস্যা নেই।’ কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আসলে ভুয়া তথ্যকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা।জনমত ও এআই ব্যবহারজুনে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ফিলিপাইনের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ এখন ভুয়া তথ্য নিয়ে আগের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে, এ বছরের মার্চে পরিচালিত জরিপে অন্তত ৫১ শতাংশ মানুষ চায় দুতার্তেকে তার অভিযোগের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হোক, এবং ৬৬ শতাংশ মানুষ সারা দুতার্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তার অভিশংসন প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছে।ফিলিপাইনের নির্বাচনের আগে এআই ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর হার বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে যেসব ভুয়া দাবি ছড়ানো হয়েছে, তার এক তৃতীয়াংশের পেছনে ডিপফেক প্রযুক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার দেখা গেছে।নীতি ও চ্যালেঞ্জডেটা অ্যান্ড এআই এথিকস পিএইচ-এর নির্বাহী পরিচালক কার্লজো হাভিয়ের বলেন, ‘এটি এআই-এর নয়, বরং মানব আচরণের সমস্যা। ভুয়া তথ্য ছড়ানোর এই অপচেষ্টা এআইকে ব্যবহার করে আরও জটিল হয়েছে।’তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিকদের এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে নীতি প্রণয়নে উদ্যোগী হওয়া উচিত। তবে তাদের অনেকে যেহেতু এর সুবিধাভোগী, তাই বাস্তবে কতটা উদ্যোগী হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
