ফুলে ফুলে ঘুরবে রোবট-ভ্রমর


ফুলে ফুলে ঘুরবে রোবট-ভ্রমর
রোবট কথা বলে, গান গায়। রোবট খেলে, নাচে, দৌড়ায়। কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার যুগে আজকাল রোবট মানুষের মতো আচরণ করে। তাই নানা আকারের রোবট বানানোর প্রতিযোগিতা এখন বিশ্বজুড়ে। এটা যেন বুদ্ধি ও শক্তিমত্তা প্রদর্শনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এবার এমন এক রোবট তৈরি করা হচ্ছে, যার কাজ হবে বাস্তবে ফুলে ফুলে ঘোরা। এ রোবট দেখতে ভ্রমরের মতো; তার কাজও ফুলে পরাগায়ন ঘটানো। ফুলের জন্য তো ভ্রমর আছেই, তাহলে ভ্রমর রোবটের কী প্রয়োজন– এমন প্রশ্ন অনেকের মনে আসতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ রোবটের প্রয়োজন আছে। কারণ, এটি এমন জায়গায় পরাগায়ন ঘটিয়ে যাবে, যেখানে ভ্রমর কখনও পৌঁছাতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একদল গবেষক ক্ষুদ্রাকৃতির এ রোবট তৈরিতে কাজ করছেন। দেখতে এটি অনেকটাই ভ্রমরের মতো। কাগজের ক্লিপের চেয়েও হালকা এ রোবট প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ বার ডানা ঝাপটাতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ তুলতে পারে প্রতি সেকেন্ডে দুই মিটার পর্যন্ত। এটি উল্টে যেতে, ভেসে থাকতে এবং নানা কসরতও করতে পারে। গবেষকদের আশা, ভবিষ্যতে এমন রোবট কৃত্রিম পরাগায়নে ব্যবহার করা যাবে। এমনকি পৃথিবীর বাইরে মঙ্গলগ্রহেও এটিকে পাঠানো যেতে পারে। এমআইটির ডক্টরাল শিক্ষার্থী ই-হসুয়ান নেমো হসিয়াও বলেন, মঙ্গলে ফসল ফলাতে চাইলে প্রাকৃতিক কীটপতঙ্গ নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সেখানে আমাদের রোবট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। প্রকল্পটির প্রধান গবেষক কেভিন চেন জানান, এর উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক মৌমাছিকে প্রতিস্থাপন নয়। বরং যেখানে মৌমাছি টিকে থাকতে পারে না, সেখানে এ রোবট ব্যবহারই মূল লক্ষ্য। প্রকৃতির অনুকরণে রোবট তৈরির এটাই প্রথম ঘটনা নয়। এ ধরনের রোবট নিয়ে বিজ্ঞানীরা আরও কাজ করছেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তৈরি করেছেন গিরগিটির মতো রোবট, যা বিপজ্জনক ধ্বংসস্তূপে নিজ অঙ্গ কেটে ফেলে বেরিয়ে আসতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার চুং-অ্যাং বিশ্ববিদ্যালয়ের দল বানিয়েছে শুঁয়োপোকার মতো রোবট, যা শরীর বাঁকিয়ে হামাগুড়ি দিতে সক্ষম। এমআইটির গবেষকদের ভ্রমরসদৃশ রোবটের ডানা তৈরি হয়েছে লেজার-কাট প্রযুক্তিতে। এর কৃত্রিম পেশি প্রসারিত ও সংকুচিত হয়ে ডানা ঝাপটায়। গবেষকরা একই সঙ্গে ঘাসফড়িংসদৃশ একটি রোবটও তৈরি করছেন, যা আকারে মানুষের আঙুলের চেয়েও ছোট। এটি এক লাফে ২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে উঠতে পারে। এ ক্ষুদ্র রোবটগুলো দুর্যোগের ধ্বংসস্তূপে নিখোঁজদের সন্ধানে, কিংবা পাইপলাইন বা টারবাইন ইঞ্জিনের ভেতর অনুসন্ধানে ব্যবহারের উপযোগী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছোট্ট আকারের রোবট তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা শক্তি সরবরাহ। এর মধ্যে জ্বালানি বেশি দিতে গেলে ওজন ও আকৃতি বাড়বে। বর্তমানে এসব রোবট তারের মাধ্যমে চালনা করা হয়। ব্যাটারি বা সেন্সর বসিয়ে এগুলোকে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। গবেষকদের ধারণা, বাস্তবে এমন রোবট কাজে লাগাতে আরও ২০ থেকে ৩০ বছর সময় লাগতে পারে। কেভিন চেন বলেন, পোকামাকড় কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তনের মাধ্যমে যে দক্ষতা অর্জন করেছে, সেখান থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। তাদের গতি, আচরণ আর গঠনের ভেতরেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সূত্র লুকিয়ে আছে। সূত্র: সিএনএন।