বাড়তি মজুরিতেও সামলানো যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির চাপ


মজুরি বৃদ্ধির হারের চেয়ে এখনো ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি মূল্যস্ফীতি। ফলে এই বাড়তি আয় দিয়ে সামলানো যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতির চাপ। সরকারি হিসাবে দিনমজুর শ্রেণির আয় কিছুটা বাড়লেও যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে চাকরি বা কাজ করেন তাতের আয় বাড়ছে না। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক খাতেও বাড়ছে না কাঙ্ক্ষিত বেতন। ফলে মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। জুন মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও এখনো এ হার ১০ দশমিক ৪২ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। রোববার কনজুমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৯ দশমিক ০২ শতাংশ। সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও লাগাম টানতে না পারায় মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে মানুষ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী রোববার বলেন, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। ফলে জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে নেমেছে। মানুষ অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সঙ্গতি নেই। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে, অন্যদিকে তেমনি আয় বাড়ানোর উদ্যোগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি। যেমন নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোতে অর্থের পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি এবং বাজার স্থিতিশীল রাখা। কেননা একেক পণ্যের একেকদিন দাম অতিমাত্রায় ওঠানামা করলে ক্রেতারা বিপাকে পড়েন। এছাড়া শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের মান বাড়িয়ে আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা দরকার। বিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এখনো ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এদিকে গ্রামে জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশে, আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে এখনো ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশে, আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুন মাসে মজুরি হার বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা মে মাসে ছিল ৭.৮৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে কৃষিতে মজুরি হার বেড়ে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা মে মাসে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। শিল্পে মজুরি হার বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা মে মাসে ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া সেবা খাতে মজুরি হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা মে মাসে ছিল ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।