বাতিল হচ্ছে ৩শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প
অনলাইন নিউজ ডেক্স
বাতিল হচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ৩শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। অভিযোগ উঠেছে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়েছিল। কোনো কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল জোরপূর্বক। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির পরও শাহজালালসহ কয়েকটি বিমানবন্দরের প্রায় ৩শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাতিল করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক। কাজগুলো নতুনভাবে সরকার নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাস্তবায়ন হবে। এসব প্রকল্পের তালিকা ধরে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। কাজগুলোর মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকেন্দ্রিক মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিমানবন্দরের স্থাপনা নির্মাণ।
বেবিচক বলছে, উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাধ্যবাধকতা, ডিপিডি না মানা, ফিজিবিলিটি স্টাডি না হওয়া এবং বিমাসংক্রান্ত কাগজপত্র জমা না দেওয়ায় প্রকল্পগুলো বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পছন্দের ঠিকাদার কাজ না পাওয়ায় প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন। এতে ঠিকাদারের পাশাপাশি বেবিচকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ফের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজে নামতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হবে।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে কুর্মিটোলার ইর্শাল কলোনিতে ১৪ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, কাওলায় ১৪ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, থার্ড টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে স্টেকহোল্ডারদের জন্য অফিস ভবন নির্মাণ, সিএটিসি কমপ্লেক্সে নতুন মসজিদ নির্মাণ, বেবিচক হেড অফিসের পূর্বপাশে ৬ তলা অফিস ভবন নির্মাণ, বেবিচকের প্রশাসনিক এলাকায় সেমসুর অফিস কমপ্লেক্স, ওয়ার্কশপ ও ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, তেজগাঁওয়ে ২টি ৬ তলা ভবন নির্মাণ, আমবাগানে নতুন মসজিদ নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ, কুর্মিটোলায় বেবিচক কলেজের পাশে একাডেমিক ভবন নির্মাণ। এছাড়া ঢাকার বাইরে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে ৬ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে সেন্ট্রাল স্টোর, অভিযোগ সেন্টারসহ অন্যান্য অফিসের জন্য ভবন নির্মাণ, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ১৪ তলা ভবনের ১০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, ৬ তলা কোয়ার্টার নির্মাণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরে ডি টাইপ কোয়ার্টার নির্মাণ, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে ৬ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমানবন্দরে অফিস ভবন কাম রেস্ট হাউজ, কার পার্কিং, কানেক্টিং এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ভূমি উন্নয়ন, ড্রেনেজ সিস্টেমের নির্মাণকাজ, ওসমানী বিমানবন্দরে ১০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, ৬ তলা কোয়ার্টার নির্মাণকাজ রয়েছে।
জানা গেছে, বিগত আর্থিক বছরে বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে এসব স্থাপনার নির্মাণ ব্যয় বহন করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী, সংস্থাটির বর্ধিত জনবলের দাপ্তরিক, আবাসন, ধর্মীয় উপাসনা, শিক্ষালয় প্রভৃতি সুবিধার জন্য কাজগুলো জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ এখনো শুরু হয়নি। এছাড়া এসব কাজের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য গেল বছর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেয়। সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
তবে চলতি অর্থবছর ‘পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন ‘আবাসিক ভবন’, ‘অনাবাসিক ভবন’ এবং ‘অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা’ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণকাজের ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে, অর্থ বিভাগের এমন নির্দেশনা রয়েছে।
বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কার্যাদেশের মধ্যে শুধু পূর্ত কাজ অন্তর্ভুক্ত, ই/এম কাজ অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে কাজ বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। ডিপিপি প্রণয়ন বা অনুমোদন না করে কাজগুলোর প্রশাসনিক অনুমোদন, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ, কার্যাদেশ দেওয়ায় এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ এটা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা শৃঙ্খলার পরিপন্থি। এছাড়া চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতাধীন ভবন নির্মাণসংক্রান্ত কাজের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিধিনিষেধ রয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সাধারণ বিমা করপোরেশনের ইন্স্যুরেন্স ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি। দাপ্তরিক/আবাসিক/মসজিদ/কলেজ একাডেমিক ভবন সংশ্লিষ্ট কাজগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডি করা জরুরি। প্রশাসনিক অনুমোদনসহ সরকার নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের অভিযোগ কাজ চলমান রয়েছে এমন কিছু কাজের চুক্তিও বাতিল করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে যেভাবে পেরেছে প্রকল্প তৈরি করেছে। টাকা নেই তারপরও প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনেক ঠিকাদার আছেন যারা প্রকল্প হাতে নিয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো যদি বাস্তবায়ন করা হয় তবে এর ব্যয় পরিশোধ করতে আগামী দুই অর্থবছর লাগবে। তার মতে, অনেক প্রকল্প আছে যেগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। জোর করে এমনকি ঘুস দিয়ে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর এখন সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে প্রকল্পগুলো বাতিলের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।