বিমানের ফ্লাইটে বিদ্যুৎ ছিল না ২ ঘণ্টা


প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলেন যাত্রীরা। নানা চেষ্টা-তদবির করেও ফ্লাইটটি মেরামত করতে না পারায় একপর্যায়ে যাত্রীদের নামিয়ে আনা হয়। পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে প্রকৌশলীরা চট্টগ্রামে গিয়ে মেরামত করে প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর ফ্লাইটটি আকাশে ওড়ে। মঙ্গলবার শাহ আমানত বিমানবন্দরে ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাইগামী ফ্লাইটে (বিজি ১৪৭) এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্লেনের কেবিনে তীব্র গরম ও অন্ধকারে মানবেতর সময় কাটাতে হয়েছে যাত্রীদের। বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর্যায়ে যাত্রীদের প্লেন থেকে নামিয়ে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। খোদ বিমানের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করে বলেছেন, বিমানের একজন শীর্ষ প্রকৌশলীসহ বিভাগের একাধিক প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে আরও একাধিক দুর্ভোগের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। জানা যায়, মঙ্গলবার বিমানের ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী ফ্লাইটটি ছাড়ার কথা ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। কিন্তু ফ্লাইট ছাড়ার আগ মুহূর্তে পাইলট বিমানের একটি ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখতে পান। পাওয়ার ইউনিটও কাজ করছিল না। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ওই শীর্ষ প্রকৌশলীকে অবহিত করা হয়। তিনি এয়ারক্রাফটি মেরামত করার জন্য প্রকৌশলী টিম পাঠান। সংশ্লিষ্ট টিম উড়োজাহাজটি মেরামত করলেও পাওয়ার ইউনিটে বেশকিছু ত্রুটি আছে বলে জানান। তারা এয়ারক্রাফটি হ্যাঙ্গারে এনে আরও ভালোভাবে মেরামত করার সুপারিশ করলেও ওই শীর্ষ প্রকৌশলীর চাপে পরবর্তী সময়ে ফ্লাইটটি ছাড়তে বাধ্য হন পাইলট। যার কারণে এয়ারক্রাফটি চট্টগ্রাম যাওয়ার পর ওই ইঞ্জিনের পাওয়ার ইউনিটটি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রকৌশলীরা প্রায় ২/৩ ঘণ্টা চেষ্টা করেও ওই পাওয়ার ইউনিট ঠিক করতে পারেননি। ওই সময় ফ্লাইটে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। একপর্যায়ে যাত্রীরা চিৎকার-চ্যাঁচামেচি শুরু করেন। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেক যাত্রী। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের চরম কষ্ট পোহাতে হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট থেকে যাত্রীদের নামিয়ে এনে স্থানীয় একটি হোটেলে নিয়ে যান। এরপর ঢাকা থেকে ২ জন প্রকৌশলী গিয়ে ফ্লাইটটি মেরামত করেন। বিমান সূত্রে জানা যায়, মেরামত শেষে পরদিন দুপুর ২টায় ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম থেকে দুবাই ছেড়ে গেছে। ফ্লাই দুবাইয়ের প্লেনে অসুস্থ প্রবাসী, এক ঘণ্টায়ও আসেনি শাহ আমানতের অ্যাম্বুলেন্স : মোহাম্মদ মনছুর (৫৫)। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফ্লাই দুবাইয়ের প্লেনে চড়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এ সময় প্লেনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্লেনের পাইলটকে এ খবর দেওয়া হলে অসুস্থ যাত্রীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখতে বার্তা পাঠান শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে। এরপর কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে বিমানবন্দরের ফায়ার ইউনিটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এর মধ্যেই সোমবার সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে ফ্লাই দুবাই এফজেড-৫৫৩ উড়োজাহাজটি। বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর অ্যাম্বুলেন্স খুঁজে পাননি বিমানের ক্রুরা। এক ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও অসুস্থ রোগীকে নিতে এগিয়ে আসেনি কোনো অ্যাম্বুলেন্স। জরুরি মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এমন গাফিলতিতে হতবাক যাত্রীরা। জানা যায়, বিমানবন্দরের ফায়ার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর শরীফের অনুমতি ছাড়া কোনো গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্স বের না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সময় ওমর শরীফের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। ততক্ষণে বিমানবন্দরে হইচই পড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে অসুস্থ যাত্রী মনছুরের স্ত্রী জুবলি আক্তার বলেন, আমরা আগে থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলাম। সকাল ৯টার দিকে মাইকে ঘোষণা করা হয়, মনছুরের কোনো স্বজন আছেন কি না। আমি দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছিলাম। কোথায় গেলে তাকে খুঁজে পাব, সেটিও বুঝতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে ৯টার পরে তাকে একটা অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। বর্তমানে অসুস্থ মনছুর চট্টগ্রাম মেডিকেলের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৫১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব থেকে দুবাই হয়ে চট্টগ্রামে আসার জন্য বিমানে উঠি। এরপর আর কিছু জানি না। ওই ফ্লাইটে অসুস্থ রোগী থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফ্লাই দুবাইয়ের চট্টগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার নাজিয়া আফরিন। এদিকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফায়ার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর শরীফ বলেন, আমার নির্দেশনা ছিল যাতে কেউ ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার না করে এবং অপারেশনে যেন বিঘ্ন না ঘটে। কিন্তু কন্ট্রোল রুম থেকে নির্দেশ দিলে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি পাঠানো হয়। অসুস্থ মনছুরকে নিতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে দেরি হয়নি বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা। বিমান অবতরণের এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর অসুস্থ যাত্রীকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাক্তাররা সেখানে থাকেন। তারা দেখার পর নির্দেশনা দেন যে, অসুস্থ যাত্রীকে কী করতে হবে। এরপর আমরা ব্যবস্থা নিই। সেদিন আমার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল না।