ব্যাংকিং জটিলতায় সংকটে গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ব্যবসা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
চট্টগ্রামে গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী তথা পোশাক শিল্পের প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকরা ব্যাংকের নানা বিধি-নিষেধ ও জটিলতায় পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। রপ্তানির পরও সময়মতো এলসি পেমেন্ট না পাওয়া, ইএক্সপি বা রপ্তানি অনুমতির মেয়াদ কম হওয়া, ইডিএফ বা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড আটকে দেওয়া, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ‘ক্রেডিট রিপোর্ট’ আদায়ে বাড়তি অর্থ ব্যয়, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে টাকার বিনিময় হারের তারতম্যসহ অন্তত পাঁচ ধরনের সমস্যায় তাদের ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। চট্টগ্রামে এই খাতের অন্তত ৩০০ ব্যবসায়ীসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব সমস্যা সমাধানে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পোশাক শিল্পের প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক হিসাবে কাজ করে থাকেন এক্সেসরিজ ব্যবসায়ীরা। সব ধরনের আমদানি-রপ্তানির লেনদেন তথা এলসি, পেমেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলেই হয়ে থাকে। এ খাতে বছরে অন্তত ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাংকের অন্তত ৫ ধরনের সমস্যার কারণে তারা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাদের অভিযোগ, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চলে (ইপিজেড) পণ্য সরবরাহ, এক্সেসরিজ আমদানি বা পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে টাকা পেমেন্টের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সময় ১২০ দিন বা ততোধিক থাকলেও বেশির ভাগ ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধ করে না। এটা অনির্দিষ্টকাল অব্যাহত থাকে। এ ক্ষেত্রে আবার ওভার ডিউ বা মেয়াদোত্তীর্ণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ২ শতাংশ হারে সুদ দাবি করে। আবার কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য বন্দরে না পৌঁছালেও বিএল (বিল অব লেডিং) আসার ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে ব্যাংকের পেমেন্ট ছাড় করে দিতে বাধ্য করা হয়।
সূত্র জানায়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে একটি চালানের জন্য আগে ১৮০ দিনের এক্সপোর্ট পারমিশন (ইএক্সপি) দেওয়া হলেও বর্তমানে তা করা হয়েছে ১২০ দিন। অনেক ক্ষেত্রে এই সময়ের মধ্যে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। এই অজুহাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয় না রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড বা ইডিএফ। রপ্তানির আগে এলসির বিপরীতে কী পরিমাণ পণ্য প্রয়োজন তার জন্য বন্ড কমিশনারেট থেকে নেওয়া হয় ইউটিলাইজেশন পারমিশন বা ইউপি। পণ্য রপ্তানি বা সরবরাহের ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানিমূল্য বৈদেশিক মুদ্রায় আদায়ের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে প্রত্যয়নপত্র বা পিআরসি দাখিল করতে হয় বন্ড কমিশনে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক নানা অজুহাতে নির্ধারিত সময়ে এই পিআরসি দেয় না। যে কারণে বন্ড অফিস পরবর্তীতে আবার পণ্য রপ্তানির সুযোগ না দেওয়া, ইডিএফ সুবিধা বাতিল করাসহ নানা হয়রানি করে। এ অবস্থায় এক্সপোর্ট পারমিশনের (ইএক্সপি) মেয়াদ ১ বছর করার দাবি তাদের। প্রতিটি পণ্য চালান আমদানির বিপরীতে রপ্তানিকারকের ক্রেডিট রিপোর্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানির জন্য যোগ্য কিনা বা কোনো ধরনের কালোতালিকাভুক্ত আছে কিনা-সে বিষয়টি নিশ্চিত করে এই ক্রেডিট রিপোর্ট। তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে প্রতিটি আমদানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকের ক্রেডিট রিপোর্ট আদায় করা হয়। এ ক্ষেত্রে ১০০ ডলার থেকে ১৫০ ডলার ফি পরিশোধ করতে হয় সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে। তারা বলেন, এই রিপোর্ট নিতে ২-৩ দিন সময় চলে যায়। একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আরেক দিকে সময়- দুটোর অপচয় রোধে কেন্দ ীয় ব্যাংক একটি ডাটা ব্যাংক করতে পারে। এতে করে তফসিলি ব্যাংকগুলো ন্যূনতম ফিতে এক ক্লিকেই ক্রেডিট রিপোর্ট নিতে পারে। বর্তমানে আমদানি-রপ্তানির বিনিময় হার ৫ থেকে ৮ টাকার মতো। প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদের জন্য এই বিনিময় হার ২ টাকার মধ্যে করা এবং এই শিল্পকে বাঁচাতে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনারও দাবি তাদের।
চট্টগ্রাম গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যাসোসিয়েশনের (সিজিএএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল বলেন, এমনিতেই রপ্তানি অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। তার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক তথা ব্যাংকিং খাতের নানা জটিলতা, অযৌক্তি শর্ত, বাধ্যবাধকতার কারণে এক্সেসরিজ ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। উদ্ভূত সমস্যাগুলো সমাধানে যাতে নতুন বছর থেকেই পদক্ষেপ নেয়া হয় সে লক্ষ্যে একটি প্রতিনিধি দল কাল (১ জানুয়ারি, বুধবার) বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এক্সেসরিজ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে গার্মেন্টস শিল্পও ক্ষতির মুখে পড়বে বলে জানান তিনি।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।