মালয়েশিয়া প্রবাসীর লাশ নিচ্ছে না পরিবার


এ যেন নির্মম বাস্তবতা। জীবনের গল্পটা যাদের ঘিরে, সেই তারাই যেন আজ চিনেও চিনছে না। পরিবারের অভাব ঘোচাতে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানো প্রবাসী আজ না ফেরার দেশে। যাদের জন্য এতকিছু তারাই ভুলে গেল সবকিছু। ছিন্ন-ভিন্ন করল সব বন্ধন! মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রাণ হারানো বাংলাদেশি রেমিটেন্সযোদ্ধা মো. আবদুল সোবহান (৪৯)। চলতি বছরের ১৭ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে। মালয়েশিয়ার পেরাক রাজ্যের ইপোহ শহরের রাজা মনজিৎ সিং ইপোহ হাসপাতাল মর্গে প্রায় ২ মাস ধরে পড়ে আছে তার মরদেহ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানালে হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নেয় বাংলাদেশ হাইকমিশন; কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাতে লেখা একটি পাসপোর্ট ছাড়া নিহতের পরিচিত কারো কোনো তথ্য দিতে পারেনি। পাসপোর্ট অনুযায়ী ওই বাংলাদেশির নাম মো. আবদুল সোবহান (৪৯)। তিনি কুমিল্লা জেলার নুরের জামানের ছেলে। হাইকমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্ট্রোকজনিত কারণে মো. আবদুল সোবহানকে ২০২২ সালে অপরিচিত এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। মৃতের হাতে লেখা পাসপোর্টে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় এবং তার পরিবার ও স্বজনদের খুঁজে না পাওয়ায় মরদেহটি দেশে পাঠানো যাচ্ছে না বলে জানায় মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন। প্রবাসী ওই বাংলাদেশির বিস্তারিত পরিচয় নিশ্চিতে চেষ্টা চালায় বাংলাদেশ হাইকমিশন। মরদেহ শনাক্তে স্বজন বা অন্য পরিচিতজনদের হাইকমিশনে যোগাযোগ করতেও বলা হয়। এ বিষয়ে সোমবার কথা হয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) সুমন চন্দ্র দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, আব্দুল সোবহানের পারিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলায় তার বাড়ি; কিন্তু পরিবার আব্দুল সোবহানের লাশ দেশে নিতে চাচ্ছে না। হাইকমিশন থেকে বারবার তার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরেও কোনো উত্তর মিলছে না, এটা খুব দুঃখজনক। তিনি বলেন, তাদের ফোন দেওয়া হলেও এখন ফোন রিসিভ করছে না। কারো পরিবার যদি লাশ দেশে দাফন করতে চান সেক্ষেত্রে অফিসিয়ালি আবেদন করলে হাইকমিশন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্ব দিয়ে লাশ দেশে প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। অন্যথায় মালয়েশিয়ার বিদ্যমান আইন ও বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লাশ স্থানীয়ভাবে দাফনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে বলে জানান তিনি। সুমন চন্দ্র দাসের কাছ থেকে তার পরিবারের নম্বর নিয়ে ফোন করলে প্রথমে ফোন রিসিভ করলে জানতে চাইলে তখনই ভুল নম্বর বলে লাইন কেটে দেওয়া হয়। এরপর বারবার ফোন করলেও অপরপ্রান্ত থেকে আর কেউ ফোন রিসিভ করেনি। লাশ দেশে আনতে পরিবারের এমন নির্মমতা মেনে নিতে পারছেন না প্রবাসীরা।