মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ১৭০০


মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ১৭০০
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানি বেড়ে ১৭০০ জনে দাঁড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপে জীবিত অথবা মৃত ব্যক্তিদের খোঁজে চলছে উদ্ধার অভিযান। তবে বেশির ভাগ এলাকায় স্থানীয় লোকজনই দলবেঁধে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। তবে উদ্ধারকাজের গতি কম। বিভিন্ন দেশ উদ্ধারকর্মী পাঠালেও যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে যেতে বাধার মুখে পড়ছেন তারা।এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ আট দেশে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয় মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে। এ কারণে মান্দালয়েই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ভূমিকম্পে থাইল্যান্ডে অন্তত ১৭ জন মারা গেছেন। দুই দেশে হাজারো ভবন ধসে পড়েছে। সড়ক ও সেতু ভেঙেছে অনেক। বিদ্যুৎ সরবরাহেও অচলাবস্থা চলছে।গতকাল রোববার মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং জানান, ভূমিকম্পে অন্তত ১ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু ও সাড়ে ৩ হাজার আহত হয়েছেন। নিখোঁজ ৩০০ জন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।ভূমিকম্পের পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত ব্যক্তিদের বের করে আনতে দিনরাত কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু বেশির ভাগ উদ্ধারকর্মীকে খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাতে হচ্ছে। উদ্ধারকাজের জন্য ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, এত বড় এক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ মিয়ানমারের নেই।ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের পাশে সাহায্য নিয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক দেশ। বাংলাদেশ থেকেও একটি উদ্ধারকারী দল সেখানে গেছে। ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি বিদেশি উদ্ধারকর্মীরা দেশটিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যেতে শুরু করেছেন।এদিকে উদ্ধারকাজের মধ্যেই গতকাল দুপুরে ৫ দশমিক ১ মাত্রার একটি মাঝারি ভূমিকম্প হয়েছে মিয়ানমারে। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায়ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তবে এতে কোনো ক্ষতি হয়নি।ভূমিকম্পে মিয়ানমারে বহু ভবন ও স্থাপনা ধসে পড়েছে। মান্দালয়ে ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের একজন ২৫ বছরের হতেত মিন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘সেখানে চারপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও উদ্ধারকারী দল আমাদের সেখানে যায়নি।’ তারও কয়েকজন স্বজন একটি ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছেন। খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।মান্দালয়ের শহরতলি আমারাপুরা। সেখান থেকে একজন উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, তিনি একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিচে চাপা পড়া ১৪০ বৌদ্ধভিক্ষুর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। ওই উদ্ধারকর্মী বলেন, ‘আমরা তাদের সাহায্য করতে পারছি না। কারণ, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেওয়ার মতো লোকবল ও যন্ত্রপাতি আমাদের নেই। কিন্তু আমরা আশা ছাড়ছি না। আমরা উদ্ধারকাজ বন্ধ করব না।’মান্দালয়ের এক চা বিক্রেতা ধসে পড়া একটি রেস্তোরাঁর ইট সরিয়ে ভেতরে কেউ আছে কি না দেখছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখানে ভবনধসে সাতজন মারা গেছেন। ভেতরে আরও কেউ আটকা আছেন কি না, তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি জানি ভেতরে মানুষ থাকলেও তাঁদের কেউ আর জীবিত নেই। আমরা জানি না ভেতরে কত মরদেহ আছে। কিন্তু আমরা নিজেরা খুঁজে দেখার চেষ্টা চালাচ্ছি।’গতকাল জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তাবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ জানায়, যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে আহত ব্যক্তিদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু উদ্ধারকর্মী এসেছেন, তবে তাঁরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যেতে পারছেন না। এখন জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করা খুব জরুরি।