মুখে রং মেখে বিয়ের সাজ


বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে কত রকম ঐতিহ্য। একেক সম্প্রদায়ের একেক ধরনের রীতি। কিছু কিছু দেশের নিয়ম-কানুন একেবারেই ভিন্নধর্মী, মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য। এমনই এক দেশ বুলগেরিয়া। রীতিমতো পুরো মুখমণ্ডলে সাদা রং মেখে দেওয়া হয় বিয়ের সাজ। মুসলিম পোমাক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রীতি বহুকাল ধরে পালিত হয়ে আসছে, যা ধরে রেখেছে বর্তমান প্রজন্মও। বুলগেরিয়ায় বিয়েতে কনের সাজে দেখা যায় এই ভিন্নতা। বিছানায় চোখ বুজে চুপচাপ শুয়ে থাকে কনে। তাকে ঘিরে থাকে একদল নারী। শুয়ে থাকা ওই নারীর মুখে প্রসাধনীর প্রলেপ বসায় তারা। নিখুঁতভাবে যত্ন করে বসানো নানা রঙের চুমকি। আঁকা হয় ফুল। করা হয় নকশা। মুসলিম এই জনগোষ্ঠী পোমাকের বিয়ের অন্যতম মূল আকর্ষণ এই কনের মুখে সাদা রঙের প্রলেপ। বুলগেরিয়ার মুসলিম বিয়ে দুদিন ধরে আয়োজন চলে। তারা তুর্কি-ওসমানিদের রীতি অনুযায়ী বিয়ে করে থাকেন। প্রথম দিনে বিয়ের সব উপহার কনের ঘরের বাইরে রেখে আসা হয়। বিয়ের দ্বিতীয় দিন পুরো গ্রামবাসী মেতে ওঠে নাচে-গানে, হাসি-তামাশায়। রাস্তায় হয় ঐতিহ্যবাহী নাচ ‘হোরো’। গ্রামবাসীর সঙ্গে এই নাচে প্রথমে বর এবং পরে যোগ দেয় কনে। এর পরই আসে কনের মুখ পেইন্ট করার পালা। বৈবাহিক জীবন শুরুর চিহ্ন হিসাবে কনের মুখ বিচিত্র রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয়। এটি করতে সময় লাগে প্রায় দু’ঘণ্টা। পুরো সময়টিতে চোখ বন্ধ করে রাখেন কনে। তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় অন্যরা। চোখ বন্ধ রেখেই আবার যোগ দেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। বিয়ে শেষ হওয়ার পরই কেবল চোখ খুলতে পারেন কনে। মুখ রাঙানোর এই প্রথাকে বলা হয় ‘জেলিনা’। এরপর ইমাম এসে বিয়ে পড়িয়ে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ ও শুভকামনা জানান। এরপর বর কনেকে নিজের ঘরে নিয়ে আসেন এবং কনের মুখ থেকে রংগুলো মুছে ফেলেন। এমনই এক বুলগেরিয়ান কনে জেরোভা। তিনি বলেন, বিয়ের আয়োজন দু’দিন ধরে চলে। প্রথম দিনটি বরকে উৎসর্গ করা হয়, তার অতিথি, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়রা আসে, চলে খাওয়া-দাওয়া। দ্বিতীয় দিনটি আমার। বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে মজা করি। উল্লেখ্য, পোমাক মুসলিম হলো বুলগেরিয়া, উত্তর-পূর্ব গ্রিস ও উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে বসবাসরত বুলগেরীয় স্লাভিক ভাষী মুসলিম সম্প্রদায়। বুলগেরিয়ায় বুলগেরীয় মুসলিম নামে স্বীকৃতি রয়েছে তাদের। সূত্র: এএফপি