মুখ খুলতেই তোপের মুখে অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়ানো তারকাদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। হোয়াটসঅ্যাপে ‘আলো আসবেই’ নামে যে গোপন গ্রুপ খোলা হয়েছিল সেটির চারজন অ্যাডমিনের মধ্যে তিনিও ছিলেন। এছাড়া আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকেও সরব ছিলেন এই অভিনেত্রী। গ্রুপটি নিয়ে তীব্র সামালোচনা চললেও এতদিন চুপ ছিলেন শামীমা তুষ্টি। অবশেষে শনিবার নীরবতা ভেঙে মুখ খুলেন তিনি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দিতেই সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। অধিকাংশ নেটিজেন তার সমালোচনা করে বলেন, তুষ্টির স্ট্যাটাস হাস্যকর। কেউ কেউ এই অভিনেত্রীর উদ্দেশে লিখেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত ভয়াবহ সব মৃত্যুর মিছিলের খবর বেরিয়েছে, সেটা আপনাদের কাঁদায়নি, আপনাদের ভাবায়নি। নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করান, আর ভাবুন- আপনারা মানুষ হিসেবে কোন শ্রেণিতে পড়েন। ফারজানা বুবলী নামের এক নারী বলেন, লজ্জা লাগল না এই স্ট্যাটাস দিতে। তারেক মিয়াজি বলেন, একটা কথা সব সময় ক্লিয়ার হওয়া উচিত সবার। মুক্তিযোদ্ধা মানেই আওয়ামী লীগ না! আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু আমি বিএনপির একজন কর্মী!তাতে কোনো সমস্যা নয়। বাংলাদেশ মানেই সবার দেশ! বিগত সরকার বার বার এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে এটা উনার বাবার দেশ!উনিই স্বাধীন করেছে! আর এটাই উনার ভুল ছিল।এজন্যই উনার শোকের মাসে উনাকেই চূড়ান্ত শোক দিয়ে দিয়েছে এ দেশের ছাত্র-জনতা। ফারজিন খান লিখেছেন, আপনি যে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে পারেন কিন্তু দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে মানুষের প্রতি কোনো অবিচারকে আপনার সহ্য করা উচিৎ নয়। ফজলে আজিম জুয়েল লিখেছেন, রোম যখন পুড়ছিল তখন আপনারা বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল, তখনো আপনারা চুপ ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত ভয়াবহ সব মৃত্যুর মিছিলের খবর বেরিয়েছে, সেটা আপনাদের কাঁদায়নি, আপনাদের ভাবায়নি। এই দলকানা রাজনীতি আপনাদের শুধু প্রতিহিংসাপরায়ন আর বিবেকহীন করেছে। লিখলে, লেখা থামবে না। নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করান আর ভাবুন- আপনারা মানুষ হিসেবে কোন শ্রেণিতে পড়েন। দ্বীন মোহাম্মদ লিখেছেন, আপনি একজন শিল্পী ও শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে যেভাবে পোস্ট করতেন তা অবাক করার মতো ঘৃণা ছড়িয়েছে। আমরা যে কোনো দল সমর্থন করতে পারি কিন্তু ন্যায় অন্যায় না বুঝলে আমরা দেশ ও সমাজের আবর্জনা। ৯৩ বিলিয়ন পাচার, গুম, খুন, বছরের পর বছর ধরে গায়েবি মামলার নির্যাতন, নগ্ন ভোট ডাকাতি, সীমাহীন দুর্নীতি, সহস্রাধিক শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড, ক্ষমতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপব্যবহার, দুঃসাশন আপনাদের অন্ধ বিবেককে নাড়া নিতে পারেনি। অথচ আপনারা নাকি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আপনারা কখনো কি দেশকে ভালোবেসেছেন? জেসমিন জামান লিখেছেন, আপনি যে গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন, সেখানে যে গরম পানি ছাত্রদের ওপর ঢেলে দেওয়ার প্ল্যান হলো সেই অরুণা বিশ্বাসও একই কথা বলেছেন। বাচ্চাদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে এটা আপনারা জানতেন না। খুব ভালো স্ট্র্যাটেজি বানিয়েছেন। এ স্ট্যাটাসটা দিয়ে নিজের পরিচয়টা কমপ্লিট করলেন। দলের সব ঠিক ছিল না, মিডিয়ার সব ঠিক ছিল না, কিন্তু আপনি ঠিক। তুষ্টির সমালোচনা করে মনির সিরাজুম বলেছেন, আপু, আপনি একটা ফটো দিয়েছিলেন। বলেছিলাম- এখন বিউটি শো অফ করার টাইম না। তখন অলরেডি ৪/৫ গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছিল। আপনি বললেন- আপনারা তো আছেন দেখার জন্য। শাওন শরিফ লিখেছেন, অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করা উচিত ছিল আরও আগে। এতগুলো মানুষ মারা গেলো, হাজার হাজার মানুষ আহত হলো- নিশ্চয়ই সবই আপনারা জানতেন। হয় তো আপনারা ভাবছিলেন যত আন্দোলনই হোক, যত লাশই পড়ুক- আওয়ামী সরকারই টিকে যাবে! রুমানা রশিদ খান বলেছেন, অন্য সবার কথা ৫ শতাংশ বিলিভ করলেও আপনার এই পোস্টের একটি শব্দ ও আপনার সঙ্গে যাচ্ছে না। ছাত্রদের যে পরিমাণ অপমান করে আপনি লিখেছেন, সেখানেই থাকতেন। আজকের এই স্ট্যাটাসটা খুবই হাস্যকর। সোহাগ লিখেছেন, এই কোটা আন্দোলনের বিপক্ষে, ছাত্রদের বিপক্ষে আপনার সেই পোস্টগুলো কই? প্রতিটা পোস্ট আপনি এই আন্দোলনের বিপক্ষে যেভাবে কাউন্টার দিয়েছেন, যারা সেগুলো দেখছে তারাই বলতে পারে। আর এতদিন পর গা বাঁচানোর জন্য এখন আপনি নাটক করতে আসছেন। রানা মাসুদ লিখেছেন, দলের চেয়ে মানুষ বড়। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের জীবন। আর শিল্পী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি। দুঃখ সারা পৃথিবী দেখলো আর আপনারা দেখতে এবং বুঝতে দেরি করে ফেললেন। শিল্পীদের কাছ থেকে মানুষ আরও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। আপনার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এটা খুবই গর্বের বিষয় কিন্তু আপনি যা করেছেন আপনি আপনার বাবাকেও লজ্জিত করেছেন। নির্বিচারে মানুষ ছাত্র-জনতা হত্যাকে আপনি বাজেভাবে সাপোর্ট করেছেন এবং খুবই নোংরাভাবে লিখেছেন।