মুঘল আমলের নিদর্শন ৪৫০ বছরের গোয়ালবাথান মসজিদ


মুঘল আমলের নিদর্শন ৪৫০ বছরের গোয়ালবাথান মসজিদ
মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম এক অনন্য নিদর্শন ৪৫০ বছরের গোয়ালবাথান জামে মসজিদ। নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামের এ স্থাপত্য ‘জিনের মসজিদ’ নামেও পরিচিত।মসজিদটি জিনদের সাহায্যে এক রাতেই নির্মাণ হয়েছিল বলে প্রচলিত আছে। একই সময়ে এলাকার মানুষের সুপেয় পানির জন্য বিশাল আকৃতির পুকুরও খনন করা হয়।প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এ মসজিদে রয়েছে মুগল স্থাপত্য রীতির সুস্পষ্ট ছাপ। যে কারণে শান্তি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক মসজিদটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ এবং অনন্য প্রত্ন নিদর্শন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটক দেখতে আসেন মসজিদটি।প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলেন, ‘জিনদের সাহায্যে এক রাতেই নির্মিত’ এ স্থাপত্য ‘জিনের মসজিদ’ নামেও পরিচিত-এমন জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। মসজিদের পাশে বিশাল আকারের পুকুরের শান্ত জলরাশির সঙ্গে মসজিদের নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।স্থানীয়দের ধারণা, মসজিদটি রাতের বেলায় যেকোনো সময় অলৌকিকভাবে নির্মাণ হয়েছে। কারণ সকালে ঘুম থেকে উঠে এ মসজিদ দেখা যায়। ৪৫০ বছর আগে মুঘল আমলে মুন্সি হয়বতউল্লাহ নামের এক বুজুর্গ ব্যক্তি কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে আসেন নড়াইলের গোয়ালবাথান গ্রামে। এ গ্রামে এসে জঙ্গলের মধ্যে আস্তানা গাড়েন তিনি। তিনি সাধক ছিলেন। এ অঞ্চলে তখন গরুর চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেখানে তিনি রাস্তা তৈরি করে বসতি গড়া শুরু করেন। তিনিই ওই গ্রামের প্রথম বাসিন্দা ছিলেন। একদিন তিনি সঙ্গীদের নিয়ে জঙ্গলের কয়েকটি গাছ কেটে ঘর তৈরির উদ্যোগ নেন। হঠাৎ এক রাতে তিনি স্বপ্নে ‘বাড়ি তৈরি না করে, মসজিদ নির্মাণ কর’ এ রকম নির্দেশনা পান। একই স্বপ্ন তিনি পরপর তিনরাত দেখেন। এই স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি।প্রচলিত আছে, জিনদের সাহায্য নিয়ে এক রাতেই অলৌকিক শক্তি দিয়ে এক গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেন মুন্সি হয়বতউল্লাহ। একই সময়ে এলাকার মানুষের সুপেয় পানির জন্য মসজিদ লাগোয়া বিশাল আকৃতির পুকুর খনন করা হয়। প্রাচীন ও ইসলামিক স্থাপত্য নিদর্শন সমৃদ্ধ মসজিদটিতে চারিদিকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দ্বারা বনজঙ্গলে ঘেরা।এলাকার মুসল্লিরা বিশ্বাস করেন, হঠাৎ গড়ে ওঠা এই মসজিদে এক সময় জিনেরা নামাজ পড়তেন। মুঘল আমলে তৈরি আশ্চর্য হওয়ার মতো এই মসজিদে ৪৫০ বছর ধরে নিয়মিত ওয়াক্তের নামাজ এবং শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করা হয়।সরেজমিন দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদের অবস্থান নড়াইল জেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে উত্তর-পূর্বদিকে চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামে নীল রংয়ের গোয়ালবাথান জামে মসজিদ। ৫ একর ৭০ শতক জমির ওপর গড়ে উঠেছে মসজিদটি। এর দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট। হাতে তৈরি পাতলা ইট আর চুন-সুড়কির গাঁথুনিতে তৈরি হয় উপরে সুনিপুণ এক গম্বুজ মসজিদ মুগল স্থাপত্যশৈলীর নান্দনিক ছোঁয়া। সুগঠিত ছোট চারটি মিনার আর দেয়ালের অসাধারণ কারুকাজও রয়েছে।বজ্রপাত নিরোধক লোহার দণ্ড রয়েছে। কোনো পিলার নাই। কোনো রডের ব্যবহার ছাড়াই মসজিদটি অপূর্ব স্থাপত্য নির্মাণশৈলী হয়ে আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত মসজিদের ভেতরে গরমের সময় ঠাণ্ডা ও ঠাণ্ডার সময় গরম অনুভূত হয়। মসজিদ সংলগ্ন মুন্সি হয়বতউল্লাহ সাহেবের বর্তমান বংশধর মুন্সি রহমতউল্লাহ এই মসজিদের ইমামতি করছেন।তিনি জানান, আমার পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, এক গম্বুজ জামে মসজিদটি এক রাতেই নির্মাণ করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, নড়াইলে এটিই সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। এখানে একসময় দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করতে আসতেন। ৪৫০ বছর আগে নির্মিত মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন এ মসজিদ দেখতে নানা বয়সের মানুষ এখানে ছুটে আসেন।জানতে চাইলে নড়াইলের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমি শুনেছি মসজিদটি ৪৫০ বছর আগে মোঘল আমলে তৈরি করা হয়েছিল। স্থানীয়রা এটিকে জিনের তৈরিও বলে থাকেন। পুরাতন মসজিদ সংরক্ষণে শিগগিরই আমাদের প্রকল্প চালু হবে। এর মধ্যেই আমরা গোয়ালবাথান মসজিদের নাম সম্পৃক্ত করেছি। আশা করছি, মসজিদটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।