মোদির ‘হিন্দি রাজনীতি’তে ক্ষুব্ধ মারাঠিরা
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির ‘হিন্দি ভাষা রাজনীতি’তে এবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মহারাষ্ট্রের মারাঠিরা। বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশটির সবচেয়ে সমৃদ্ধ এ রাজ্যে কয়েক মাস ধরেই ভাষা ও পরিচয় নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্দেশিত কেন্দ্রীয় সরকারের চাপিয়ে দেওয়া হিন্দি শিক্ষাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিতর্ক এখন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা, সামাজিক বিভাজন এবং ভোটের রাজনীতিও প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে সেই চিত্র তুলে ধরেছে বিবিসি।ভাষা নিয়ে চলমান এই বিতর্কের সূত্রপাত গত এপ্রিলে। সে সময় মহারাষ্ট্র সরকার ঘোষণা দেয়, রাজ্য পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ও মারাঠির পাশাপাশি তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষাও শেখানো হবে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের দাবি, এটি কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির (এনইপি) অংশ। ১৯৬৮ সালে চালু হওয়া এনইপি দেশটির শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যেই প্রণয়ন করা হয়। সময়ে সময়ে এই নীতিতে সংশোধন আনা হয়।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ৫ বছর আগে এর সর্বশেষ সংস্করণ চালু করে, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে এটি নিয়ে এর আগেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। রাজ্যটির ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। তাদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হিন্দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, যা অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে ভীতি ছড়িয়েছে। বিতর্কের জেরে মহারাষ্ট্র সরকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু ইতোমধ্যে এই ইস্যু ঘিরে সংঘর্ষ, বর্ণবাদী হামলা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।এ নিয়ে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। এপ্রিলে রাজ্যের থানে জেলায় দুই নারীকে মারাঠি না বলার কারণে হামলার শিকার হতে হয়। একই মাসে মুম্বাইয়ে এক নিরাপত্তাকর্মী মারাঠি না জানায় মারধরের ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত সপ্তাহে মুম্বাইয়ের এক দোকানদারকে মারাঠি না বলায় মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্তটি বাতিল করে এবং বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। তবে এখানেই বিতর্কের অবসান হয়নি। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যদিও ভাষা বিতর্কটি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, তবুও এটি দুই পুরোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›দ্বীকে প্রায় দুই দশক পর (৬ জুলাই) এক মঞ্চে নিয়ে এসেছে।মহারাষ্ট্রের এক সময়কার ‘নীতিনির্ধারক’ হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং তার চাচাতো ভাই মারাঠি জাতীয়তাবাদী দল এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরে এদিন একসঙ্গে একটি জনসভায় অংশ নেন। মুম্বাইয়ের ওরলি পার্ক অডিটোরিয়ামের মঞ্চে উঠেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঐক্যের বার্তা দেন মারাঠিদের। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আহ্বান জানান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভাষা ও পরিচয় ঘিরে এই ইস্যুটি আগামী নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে। তবে অনেকে বলছেন, ভাষাকেন্দ্রিক রাজনীতি দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কঠিন।
