আপনি কি সারাক্ষণ ওজন নিয়ে চিন্তায় থাকেন? খাবার মুখে তোলার আগেই গ্লানিবোধ হয়? ঘুমাতে যাওয়ার আগেও মনে হয়, “আরও মোটা হয়ে যাচ্ছি”? এমন হলে জগতে আপনি একা নন, অনেকেই এই চিন্তায় ঘুরপাক খান—আর আশ্চর্য হলেও সত্যি, এই মানসিক চাপই আরও বেশি ওজন বাড়ানোর দিকে ঠেলে দেয়।
মানসিক চাপ আর ওজন বৃদ্ধির যোগসূত্র
চিন্তা, উদ্বেগ আর আত্মদোষে ভোগা—এই তিনটি মানসিক অবস্থা শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে তোলে। কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে গেলে যা হয়:
ক্ষুধা বেড়ে যায়
চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে
শরীর চর্বি জমাতে শুরু করে, বিশেষ করে পেটের চারপাশে
এমনকি ঘুম কমে যাওয়া, হরমোন ভারসাম্যহীনতা এবং মেটাবলিজম ধীর হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়
অর্থাৎ, যত বেশি চিন্তা করবেন, ততই ওজন বাড়ানোর রাস্তা প্রশস্ত করবেন নিজের অজান্তেই।
করণীয় কী?
১. চিন্তার বদলে পরিকল্পনা করুন
শুধু “মুটিয়ে যাচ্ছি” ভাবলে কিছুই বদলাবে না। বরং নিজের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, যেমন:
প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটবো
রাত ১১টার মধ্যে ঘুমাবো
প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার চেষ্টা করবো
২. ‘পারফেক্ট ডায়েট’ না, ‘সাস্টেইনেবল ডায়েট’
নিজেকে একেবারে রুটি-চিনি-মিষ্টি মুক্ত জীবনে বন্দী করবেন না। পুষ্টিকর কিন্তু উপভোগ্য খাবার বেছে নিন। ৮০-২০ নীতি অনুসরণ করতে পারেন—৮০% সময় স্বাস্থ্যকর খাবার, ২০% সময় পছন্দের খাবার।
৩. মনোযোগ দিয়ে খাওয়া (Mindful Eating)
টিভি দেখে বা ফোনে স্ক্রল করতে করতে খাওয়া আমাদের অতিরিক্ত খেতে বাধ্য করে। প্রতিটি কামড় উপভোগ করুন, ধীরে খান, শরীরের ক্ষুধা ও তৃপ্তি অনুভব করুন।
৪. দেহ নয়, জীবনের মানোন্নয়নকে গুরুত্ব দিন
ওজন কমানোর লক্ষ্য যদি হয় শুধু “স্লিম দেখাতে হবে”—তাহলে মানসিক চাপ থেকেই যাবে। বরং সুস্থ, শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত থাকার লক্ষ্যে কাজ করুন।
৫. চিন্তা নিয়ন্ত্রণের জন্য মেডিটেশন বা যোগাভ্যাস
প্রতিদিন মাত্র ৫-১০ মিনিট মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ (মেডিটেশন) বা হালকা যোগাসন মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে, কমাতে পারে কর্টিসল।
৬. নিজেকে ক্ষমা করুন, ভালোবাসুন
একদিন ব্যায়াম না করলে বা মিষ্টি খেয়ে ফেললে নিজেকে দোষারোপ করবেন না। ওজন কমানো কোনো যুদ্ধ নয়—এটা নিজেকে ভালো রাখার দীর্ঘমেয়াদি যাত্রা।
পরিশেষ
ওজন কমানো শুধু খাওয়া-দাওয়ার বা ব্যায়ামের বিষয় নয়, এটা মানসিক অবস্থার সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। অতিরিক্ত চিন্তা করে নিজেকে দোষী বানিয়ে ফেললে শরীর আর মন—দুটোই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং নিজেকে ভালবাসুন, শরীরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, এবং ছোট ছোট সচেতন পদক্ষেপে জীবনযাত্রা বদলান। মনে রাখবেন, সুখী মনই স্বাস্থ্যকর শরীরের প্রথম শর্ত।