শহীদ জিয়ার প্রথম সমাধি


শহীদ জিয়ার প্রথম সমাধি
মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রথম সমাধিস্থলটি অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার এই স্থানটি অনেকের কাছে জিয়া নগর নামে পরিচিত। বিগত সরকারের ১৬ বছরে এই সমাধিস্থলে প্রকাশ্যে কেউ যেতে পারতেন না। মাঝেমধ্যে ঝটিকা সফরে এসে ফুল দিয়ে যেতেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সভা-সমাবেশ জনসমাগমে সরব হয়েছে জিয়ানগর। যারা এখানে আসছেন তাদের দাবি ঐতিহাসিক সমাধি হিসাবে এই স্থানটি সংস্কার ও নান্দনিক করে দর্শনীয় স্থানে পরিণত করতে হবে। আর এ কাজটি সরকারকেই করতে হবে।বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। ওই সময় তাকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কসংলগ্ন রাঙ্গুনিয়ার পোমড়া পাহাড়ি এলাকায় কবরস্থ করা হয়। এর ২ দিন পরই সেখান থেকে লাশ ঢাকায় নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর পাশে কবরস্থ করা হয়। তারপরও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন জিয়ানগরে এসে প্রথম সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানানো অব্যাহত রাখেন। যদিও ক্ষমতার পালাবদলের পর সমাধিস্থলটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে।বৃহস্পতিবার সরেজমিন শহীদ জিয়ার প্রথম সমাধিস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তরে সারি সারি সবুজ পাহাড় আর অরণ্য। দক্ষিণে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক। প্রকৃতির এক নয়নাভিরাম এলাকায় শহীদ জিয়ার সমাধিস্থল। এর পাশে রয়েছে ‘এতিম ও দুস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।৪ দশমিক ৯ একর জায়গার সমাধিস্থল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নৈশপ্রহরী ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। রাত্রিকালীন পাহারা ও বিশাল এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে হিমশিম খেতে হয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সংশ্লিষ্টদের। সমাধিস্থলের ফটকে কোনো নিরাপত্তাপ্রহরী না থাকায় দর্শনার্থী কেউ এলে মসজিদের ইমামকে তালা খোলার দায়িত্বটা পালন করতে হয়।স্থানীয় বাসিন্দা তসলিম খান বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা জিয়াউর রহমান। তার প্রথম কবর রাঙ্গুনিয়ায়। এজন্য রাঙ্গুনিয়াবাসী গর্বিত। তার জন্যই এই স্থানটি জিয়ানগর হিসাবে পরিচিত পেয়েছে। কিন্তু স্থানটি এখনো অবহেলিত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কোনো লোক নেই এখানে। ফটক খোলা-বাঁধার কোনো লোকও নেই। নেই নৈশপ্রহরী, নিরাপত্তাকর্মী। নেই শৌচাগার। এই স্থানটির সংস্কার জরুরি। মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক ও দেশের সাবেক একজন রাষ্ট্রপতির প্রথম সমাধি এভাবে অনাদর-অবহেলায় পড়ে থাকতে পারে না। এটা জাতির জন্য লজ্জার। ঐতিহাসিক এই সমাধিকে ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা সময়ের দাবি।’এতিম ও দুস্থ শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপ-তত্ত্বাবধায়ক মো. ছানাউল্লা বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে সমাধিস্থল ও আশপাশে ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করিয়েছি। ফল-ফলাদির বাগান করেছি। এখানে কোনো নিরাপত্তাকর্মী কিংবা নৈশপ্রহরী নেই। গত ১৬ বছর লোকজন জিয়াউর রহমানের সমাধিতে আসতে চাইলেও আসতে পারেননি। বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের রোষানলে পড়ার ভয়ে তারা বুকে পাথর চাপা দিয়ে থেকেছেন। আগত দর্শনার্থীদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধাও নেই। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শৌচাগার ব্যবহার করেন অনেকে।এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধি এলাকায় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমি সরেজমিন পরিদর্শনে যাব। কীভাবে সমাধি এবং এলাকাটি সংস্কার করে নান্দনিক ও দর্শনীয় স্থানে পরিণত করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’