শালিখায় চায়না জালে সয়লাব, বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ
মোঃ সাইফুল ইসলাম, ব্যুরো প্রধান, মাগুরা

শত শত অবৈধ চায়না দুয়ারী জালে ভরে গেছে মাগুরার শালিখা উপজেলার বিভিন্ন খাল- বিল। ধরা হচ্ছে ছোট মাছ, ধ্বংস করা হচ্ছে মাছের ডিম ফলে বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ। এতে করে প্রানীজ আমিষের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।সরেজমিনে শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের পাশ্ববর্তী বুরইল বিল, বগনালের বিল, তালখড়ি ইউনিয়নের নিংড়ার বিল, শালতার বিল, পেড়োর বিল, ধনেশ্বরগাতী ইউনিয়নের ভাটোলির বিল, পাট ভাড়ার বিল, কাজলকোঠার বিল, ভড়ভড়ের বিল, বুনাগাতী ইউনিয়নের জিয়ালার বিল, গো-সাত্রার বিল এবং গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের জিয়ালার বিল সহ অসংখ্য বিল ঘুরে দেখা যায়, ছোট- বড় নিষিদ্ধ চায়না জাল ও কারেন্ট জালে ছয়লাব হয়ে গেছে পুরো বিল। শুধু বিল নয়, খাল ও নদী- নালায় পাতা হচ্ছে চায়না জাল ধরা হচ্ছে ছোট মাছ। মাছের প্রজননের এই মৌসুমে কারেন্ট ও চায়না জাল পাতার কারণে নষ্ট হচ্ছে মাছের ডিম, বন্ধ হচ্ছে মাছের প্রজনন ঘটানো এতে করে দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে।নিষিদ্ধ এই চায়না জালকে ম্যাজিক জাল এবং ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয়। এই জালের নাম চায়না দুয়ারী হলেও উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। মাছ ও জলজ প্রাণী বিধ্বংসী এই চায়না দুয়ারীর মাধ্যমে মাছ মারার ধূম পড়েছে শালিখা উপজেলার অসংখ্য মুক্ত জলাশয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলছে মাছ মারার মহোৎসব। মেস-সাইজ কম থাকায় কারেন্ট জালের পাশাপাশি চায়না দুয়ারীর ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও মানছেন কেউ।সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার অসংখ্য খাল- বিলের বিভিন্ন জায়গায় পাতা হয়েছে চায়না দুয়ারী। পানির নিচে জাল রেখে শক্ত লাঠির সাহায্যে বেঁধে রাখা হয়েছে জালের দুই প্রান্ত। ৫০- ১০০ ফুট লম্বা এই জালগুলো মিহি ও পাতলা হওয়ায় খুব সহজেই তলিয়ে থাকছে পানির নিচে। আর এই জাল এত সূক্ষ্ম যে ছোট ছোট জাতের মাছ, এমনকি মাছের ডিমও অনেক সময় উঠে আসছে। জালগুলো হালকা ও মিহি বুননের ছোট ফাঁসবিশিষ্ট, যা কপাটের মত কাজ করে। এতে মাছসহ যেকোন জলজ প্রাণী একবার ঢুকে পড়লে জালের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।জানা গেছে, এক রাতে এই জালে যে পরিমাণ মাছ উঠে তা অন্য কোনো জালে উঠে না, সেই তুলনায় পরিশ্রম তেমন করতে হয় না এবং জালগুলো সহজলভ্য হওয়ায় এই জালের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাছ ধরার পাশাপাশি মাছের ডিম ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা হচ্ছে এই নিষিদ্ধ জালের মাধ্যমে।বিলগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পুটি, কই, টেংরা, টাকি, বেলে, ফোলই, শিং, গজার, সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ যা শিকার করতে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়েছে মাছখেকোরা। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় জাল পাতা সকালে মাছেভরা জাল ঝেড়েই বিক্রি করে স্থানীয় বাজারে। আয় করেন হাজার হাজার টাকা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বরইচারা বাজার, বাউলিয়া বাজার এবং কালিতলার মোড়ে, ধনেস্বরগাতীর কালিবাড়ি বাজারে যে সকল লোকেরা মাছ বিক্রি করে তাদের অধিকাংশের দুয়ের অধিক চায়না দুয়ারী জাল রয়েছে যা তারা বিভিন্ন বিলে পেতে মাছ ধরে পাশাপাশি বরইচারা, বাউলিয়া ও আড়পাড়া, কালিবাড়ি, বুনাগাতী বাজারসহ স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে চায়না দুয়ারী জাল বিক্রি হয় বলে জানান তারা। এভাবে অবাধে চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে দেশি মাছ ধরায় দেশি মাছের উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলেও ধারণা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।এছাড়াও দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর দৃশ্যমান তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মাছখেকোদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছেন তারা। অতিসত্বর সংশ্লিষ্ট দপ্তর চায়না দুয়ারী জালের ক্রয়-বিক্রয় প্রতিরোধপূর্বক মাছখেকোদের শাস্তির আওতায় না আনলে নিকট ভবিষ্যতে দেশি মাছের উৎপাদন একেবারেই কমে গিয়ে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অ: দা:) ফেরদৌসী আক্তার বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। বর্তমানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন, আমার অফিসের ক্ষেত্র সহকারি দেবাশীষ বিশ্বাস। তবে আমি যতদূর জানি, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একটা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।এব্যাপারে উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, বরাদ্দ কম থাকায় আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা প্রয়োজন মাফিক করতে পারছি না। বিলগুলোতে এখন পর্যন্ত কয়টি মোবাইল কোর্ট হয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো বিলে এখনো মোবাইল কোর্ট করা হয়নি আমরা শুধুমাত্র ফটকি নদীর কয়েকটি জায়গায় করেছি মাত্র।
