শালিখায় নানা কারনে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ


শালিখায় নানা কারনে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ
মাগুরার শালিখায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। সামাজিক অস্থিরতা, ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা, উচ্চবিলাসিতা, বনিবনা না হওয়া, পরকীয়া, ভুল বুঝাবুঝি, মতভেদসহ নানা কারণে ভেঙে যাচ্ছে দাম্পত্য সম্পর্ক। পরিসমাপ্তি ঘটছে দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়। বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ে পুরুষ-মহিলার তেমন সমস্যা না হলেও অনাদর ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন ছেলে-মেয়ে। শালিখা উপজেলার মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারদের দেওয়া এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, নারীদের তরফ থেকেই দেওয়া হচ্ছে অধিকাংশ তালাকের নোটিশ, যাদের বয়স ২০-৩০ এর মধ্যে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক বছরে ধনেশ্বরগাতি ইউনিয়নে ৫৬, তালখড়ি ইউনিয়নে ১২৯, শতখালী ইউনিয়নে ৮৩, শালিখা ইউনিয়নে ৮৭ বুনাগাতি ইউনিয়নে ৩৭, আড়পাড়া ইউনিয়নে ৯৩,গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে ২৬ টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ ২০২৪ সালে উপজেলার সাত ইউনিয়নে ৫১১ টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে যা গত বছর ছিল (২০২৩) ১৮৫টি , যেখানে ২০২৪ সালে ৮৫২ টি বিবাহ বা নিকাহ সম্পন্ন হয়েছিল। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪ সালে প্রতি মাসে ৪৩ টি বিবাহে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ছেলে পক্ষ থেকে তালাক হয়েছে ৩৬টি, উভয় পক্ষ মিলে মিউচুয়াল তালাক হয়েছে ১৭৩টি এবং মেয়ে পক্ষ থেকে ডিভোর্স হয়েছে ৩০৫টি যা ছেলে পক্ষের চেয়ে প্রায় নয়গুণ বেশি। ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। বিচ্ছেদে এগিয়ে রয়েছে তালখড়ি পিছিয়ে গঙ্গারামপুর ইউনিয়ন। শালিখায় বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে স্বামী-স্ত্রী পৃথক থাকছেন। বাড়ছে মানসিক সংকট। ফলে সন্তানরা অনাদর, অবহেলার শিকার হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের শৈশব। ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজে। তালাকের ঘটনাগুলোর কারণ সব একই রকম। শালিখার উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার রোকনুজ্জামান বলেন, অধিকাংশ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ পরকীয়া সম্পর্ক। এছাড়া পরিবারে বনিবনার অভাব, স্বামীর দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা, সামাজিক অবক্ষয়সহ নানা কারণে ঘটছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামে সম্প্রতি স্বামীকে তালাক দিয়েছেন টুম্মা খাতুন (ছন্মনাম)। তিনি জানান, স্বামী মাদকাসক্ত। আয় রোজগার করে না। কথায় কথায় মারধর করেন। তাই স্বামীকে তালাক দিয়েছেন তিনি। তালখড়ি ইউনিয়নের ছান্দড়া গ্রামে স্ত্রীর তালাকের শিকার হয়েছেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, তার স্ত্রী ফেসবুক আসক্ত। স্ত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ায় সে ছেড়ে চলে যায় এবং এক মাস পরে ডিভোর্স লেটার পাঠায়। শালিখা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল(অতি: দা:) বলেন, বিচ্ছেদের ঘটনা নিরসনে আমরা মাঝে মাঝেই উঠান বৈঠক করি তাছাড়া এগুলো মূলত ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব। তালাকের ঘটনা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা কোর্ট মসজিদের খতিব মুফতি মোশারফ হোসেন কাসেমী বলেন, ইসলামিক বিষয়ে অজ্ঞতা, পরকীয়া, একে অপরের সাথে ভুলবুঝা বুঝি এবং ইসলামি বিধি নিষেধ না মানার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশী ঘটছে। এতে করে সামাজিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি মানুষের মাঝে মানুষিক চাপ বাড়ছে বলেও জানান তিনি।