শেবাচিমে সিন্ডিকেটে আটকা অ্যাম্বুলেন্সের চাকা


বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে সিন্ডিকেটের দাপটে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ন্যূনতম অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছে না দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের একমাত্র উন্নত চিকিৎসা সেবা কেন্দ প্রতিষ্ঠার অর্ধশত বছরের অধিক সময়েও রোগী বাড়লেও বাড়েনি অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা। ফলে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অ্যাম্বুলেন্স সেবায় চলছে চরম সংকট। বর্তমানে রোগীর সেবায় চলছে মাত্র ২টি অ্যাম্বুলেন্স! বর্তমানে ১৪ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চলাচল উপযোগী রয়েছে অর্ধেক। কিন্তু সেই ৭টি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য চালক রয়েছে মাত্র চারজন। এদের মধ্যে দুজন ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তির চালক হিসেবে কর্মরত। ফলে রোগী বহনে কাজ করছে মাত্র দুজন চালক। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে হাসপাতালের ভেতরে অদৃশ্য একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তথ্য মতে, শেবাচিম হাসপাতালে ১৪টি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সাতটিই বিকল। সাতটি অ্যাম্বুলেন্সের বিপরীতে চালক রয়েছে বিপ্লব, জসিম, ইয়ামিন ও হাবিব। এই চারজন চালকের মধ্যে জসিম শেবাচিম পরিচালকের গাড়ি চালানোর কাজ করে। আরেকজন চালক উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকদের বহন করা মাইক্রোবাসের চালক হিসেবে কর্মরত। ফলে রোগী বহনে কাজ করছে মাত্র দুজন চালক। ফলে এ হাসপাতালে ৭টি অ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলেও চালক সংকটে চলছে মাত্র দুটি সেবা যান। এ দুজন চালকও স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেক কর্মদিবসে ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে। ফলে এ হাসপাতাল থেকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ন্যূনতম সেবা পাচ্ছে না দক্ষিণাঞ্চলবাসী। সঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের কম্পাউন্ডে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য মেডিকেলের ভেতরে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান শাহিনের নিয়ন্ত্রণে চলত শেবাচিমের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য। সরকার পতনের পর এখন তা নিয়ন্ত্রণ করছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহিনের ভাই বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান ইমন। হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা তলানিতে থাকার সুযোগে ইমনের নেতৃত্বে অর্ধশত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক প্রতিদিন রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট প্রতি মাসে মাসোয়ারা পেয়ে থাকে বলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সংকট জিইয়ে রাখা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সুযোগে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্যে একটি সমিতির মাধ্যমে নিত্যনতুন অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীও যুক্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের উন্নত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। ফলে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি সঠিক সময়ে অ্যাম্বুলেন্স সেবা না পেয়ে প্রাণ হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে। বরিশালের ঝালকাঠির বাসিন্দা মোস্তফা বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক আমার রোগীকে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে গলা কাটা ভাড়ায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে হয়েছে। এতবড় হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থাকবে না তা খুবই কষ্টকর বিষয়। বরিশাল সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, শেবাচিম হাসপাতাল দক্ষিণাঞ্চলসহ আশপাশের জেলার মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সের এ সংকট মেনে নেওয়া যায় না। তাই অবিলম্বে এ সংকট দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ সংকট তৈরির পেছনে জড়িত থাকা সিন্ডিকেট খুঁজে বের করে মূল উৎপাটন করতে হবে। নয়তো শতভাগ সেবা মিলবে না। শেবাচিম হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ও চালক সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়টি দ্রুত সমাধানে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে কোন সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা তা আমার জানা নেই।