শেষবেলায় ভিড় হলেও ভোগান্তি হয়নি
অনলাইন নিউজ ডেক্স

অন্যান্যবারের তুলনায় স্বস্তির হয়েছে এবারের ঈদযাত্রা। গতকাল শনিবার অধিকাংশ কলকারখানাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছুটির পর যাত্রীর ঢল নামলেও মহাসড়কে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়নি। অবশ্য আগের মতোই শেষ সময়ে কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকায় গতকাল বাসে যথেচ্ছ ভাড়া নেওয়া হয়েছে অন্যান্য এলাকায়।২০২২ সালের পর এবার ঈদুল ফিতরে ঈদযাত্রা হয়েছে স্বস্তির। গত বছর লম্বা ছুটিতে ঈদযাত্রা শুরুতে দুর্ভোগমুক্ত হলেও ২৮ রমজানে কলকারখানা ছুটির পর ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ব্যাপক ভোগান্তি হয়, যা পরের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ছিল। গত বছরও ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দুর্ভোগ হয়নি। তবে গুলিস্তান ফ্লাইওভারে যানজটের কারণে ঢাকা-দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল। এবার তা হয়নি।গত বছর ঈদের আগের চার দিনে যমুনা সেতুতে ৪৩টি গাড়ি বিকল হয়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধে ব্যাপক ভোগান্তি হয়েছিল। এবার তা হয়নি। আগের দিনগুলোর মতো গতকাল পদ্মা এবং যমুনা সেতুর টোলপ্লাজায় গাড়ির তীব্র চাপ থাকলেও, চলাচল বন্ধ হয়নি।সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, গাবতলী থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত সড়ক ছয় লেনে প্রশস্ত করা এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ফ্লাইওভারগুলো চালু করায় যানজট নেই এবার।কীভাবে স্বস্তির যাত্রা
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আগাম পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের কারণেই ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে। সরকারের পরিষ্কার বার্তা ছিল– বিআরটিএ, সওজ, সেতু বিভাগ, পুলিশসহ সরকারি সংস্থাগুলো কাজে ব্যর্থ হলে, জবাবদিহি করতে হবে। তা কাজে এসেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ২৬ মার্চ থেকে কার্যত ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। ঈদের আগে পাঁচ দিন সময় পাওয়ায় যাত্রীরা ধাপে ধাপে শহর ছাড়ছেন। এতে ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে। ছুটি সংক্ষিপ্ত হলে ১ কোটি মানুষ দু’দিনে শহর ছাড়তেন। এ চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হতো না। লম্বা ছুটির কারণে একই সংখ্যক যাত্রী পাঁচ দিনে যাচ্ছেন। তাই চাপ কম পড়েছে।বেতন-ভাতা আগেভাগে দিয়ে শিল্পকারখানাগুলো বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি– এই তিন দিনে ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার সফল হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়নি বলে মূল্যায়ন মোজাম্মেল হক চৌধুরীর। তিনি বলেন, আগের সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও রাজনৈতিক কারণে কার্যকর করতে পারত না। এবার সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় মহাসড়কে নৈরাজ্য কম।মহাসড়কে কিছু জায়গায় ধীরগতি, তবুও স্বস্তি
যানজটপ্রবণ ঢাকা-উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অতীতে চরম দুর্ভোগ হলেও এবার কোনো যানজট ছিল না। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে রাস্তায় নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ওইসব এলাকায় দিনভর ধীরগতি ছিল। দুপুরের পর গাজীপুরে উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ চন্দ্রা এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ধীরগতি ছিল। সন্ধ্যার পর চন্দ্রা এবং চৌরাস্তায় গাড়ির তীব্র চাপ ছিল। ধীরগতিতে যানবাহন চলছিল।চালক ও যাত্রীরা জানান, টঙ্গী থেকে চৌরাস্তা ১২ কিলোমিটার পথ যেতে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লেগেছে। স্বাভাবিক সময়ে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। ফলে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে যেতে স্বাভাবিক সময়ে এক ঘণ্টা পর্যন্ত বেশি লেগেছে। তবে এতেও অখুশি নন ময়মনসিংহের যাত্রী তানভীর আলম। তিনি বলেছেন, অন্যান্য বছর ঈদে ময়মনসিংহ যেতে ৭-৮ ঘণ্টা লাগত। এবার চার ঘণ্টা। স্বাভাবিক সময়ে তিন ঘণ্টা লাগে।বগুড়ার যাত্রী শাহারিয়ার হাসান জানান, ঢাকা থেকে পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছেছেন। স্বাভাবিক সময়েও এমনই সময় লাগে। কুড়িগ্রামের যাত্রী মীর মাহবুব হোসেন জানান, আট ঘণ্টায় পৌঁছেছেন। শ্যামলী থেকে বাস ছাড়ার পর গাবতলী এলাকায় আধাঘণ্টার মতো আটকে ছিলেন, ব্যাটারি রিকশার ভিড়ে। সাভার থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত গাড়ি ধীরগতিতে চলেছে। চন্দ্রায় আধাঘণ্টার মতো বাড়তি সময় লাগে। গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ীতেও ধীরগতি ছিল।শেষ সময়ে যথেচ্ছ ভাড়া
বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে অভিযোগ জানাতে গতকাল স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে আহ্বান জানান। রাত ৯টা পর্যন্ত ৩৫ হাজার মানুষ এতে মন্তব্য করেছেন। ১০০ মন্তব্য যাচাই করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘটনা ঢাকার বাইরের।উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেছেন, ঢাকা বিআরটিএ, র্যাব ও পুলিশ তৎপর রয়েছে। রাজধানীর বাইরে কিছু ঘটনা ঘটছে।গতকাল গাবতলী, মহাখালী, কলাবাগান, কলেজগেটে দেখা যায়, কৌশলে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে ‘শ্যামলী পরিবহন’ কাউন্টারে যশোরের টিকিটের দাম চাওয়া হয় ৭৫০ টাকা। যদিও এ রুটে ভাড়া ৫৫০ টাকা। কাউন্টার থেকে বলা হয়, বাসে শেষ গন্তব্য বেনাপোল। তাই যশোর নামলেও বেনাপোলের ভাড়া দিতে হবে।হানিফ পরিবহন, গোল্ডেন লাইন, সাতক্ষীরা পরিবহন, গ্রিনলাইন পরিবহনেও একই চিত্র দেখা যায়। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে– এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ইকোনো সার্ভিসের দুটি কাউন্টারে বাড়তি ভাড়ার প্রমাণ মেলায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই কারণে হানিফ পরিবহনকে ২০, জোনাকি পরিবহনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জের চার রাস্তা মোড়ে শনিবার দিনভর থেমে থেমে যানজট ও ধীরগতি দেখা যায়। হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়নের এসপি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ-বগুড়া অংশে শনিবার দুপুর পর্যন্ত যানজট হয়নি। বরং ঢাকা-উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন দুই লেন দিয়েই স্বাভাবিকভাবে চলেছে।যানজটপ্রবণ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড়ে এবার যানজট না থাকায় রাজশাহী অঞ্চলের যাত্রীদের ঈদ নির্বিঘ্ন হয়েছে।
