সঙ্গে পুড়ল ছেলের কিডনি বাঁচানোর আশা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ভিসা পেয়েছেন, বিমানের টিকিটও কেনা হয়েছে। সাড়ে তিন বছরের ছেলের শেষ কিডনিটা বাঁচাতে ঈদের পর চেন্নাই যাবেন বাবা। কিন্তু আগুনে শুধু নিউ সুপারমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাকের দোকানটাই পোড়েনি, দগ্ধ হয়েছে ছেলের কিডনি বাঁচানোর আশাও।
শনিবার সকাল ১১টা। নিউমার্কেটের ৪ নম্বর গেটের পাশে ফুট ওভারব্রিজে চিৎকার করে কাঁদছিলেন এক ব্যক্তি। জানতে চাইলে বলেন, ‘ছেলেকে সুস্থ করতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছি, এরপরও ভালো হয়নি। ঈদে বেচাকেনা করে সেই টাকায় ছেলেকে চেন্নাই নিয়ে যাইতাম। তার আগেই আগুন সব শেষ করে দিল। কিন্তু এখন কী করব, বুঝতে পারছি না। কীভাবে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাব?’
লোকটি অসুস্থ শিশুর বাবা আবদুর রাজ্জাক। কথা বলতে বলতে কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যান।
মার্কেটের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। এরপর আবার কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, ছেলের একটি কিডনি নষ্ট। এখন বয়স ৩ বছর ৭ মাস। নাম আবদুল্লাহ আল ইসমাইল। ইসমাইল জন্মের পর থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশি চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ করে তোলার আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছেন। কিন্তু বাবার মন মানেনি। বলছিলেন, ‘এখন একটা কিডনি আছে। অন্তত এটা ভালো রাখার জন্য লড়াই করতে চাই। সন্তান সুস্থ না হলেও অন্তত মনকে বুঝ তো দিতে পারব যে ছেলের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
রাজ্জাক বলেন, ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই তাঁর আয়ের উৎস ছিল। সংসার থেকে শুরু করে ছেলে আবদুল্লাহর চিকিৎসার খরচ নির্ভর করত দোকানের ওপর। প্রতি মাসে ছেলেকে একটি ইনজেকশন দিতে হয়, যার দাম ৫ হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া অন্য ওষুধ তো আছেই। এরপরও সুস্থ হচ্ছে না। আগামী ২৬ এপ্রিল চেন্নাই যাওয়ার ফ্লাইট। চিকিৎসা খরচ আনুমানিক ১৬ লাখ টাকা। কিন্তু এখন ওই তারিখে কীভাবে যাবেন, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
রাজ্জাক জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বড় ভাই সজীবের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। নিউমার্কেটে পোশাকের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আট-দশ বছর কাজ করার পর দুই ভাই মিলে মার্কেটের তৃতীয় তলায় এমআর ব্লক অ্যান্ড বুটিকস নামে দোকান দেন। দোকান নম্বর ৩১৭। ব্যবসার বয়স প্রায় ১৩ বছর। নারীদের পোশাক পাইকারি বিক্রি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বুটিকস এবং ব্লকের কাজের অর্ডার নেন। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বাস করেন কামরাঙ্গীরচরে। শনিবার সকাল ৭টায় মার্কেটে আগুন লাগার খবর পান। এরপর ছুটে আসেন।
দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পোশাক ছিল বলে আবদুর রাজ্জাক দাবি করেন। ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে দোকানে যান মালপত্র উদ্ধারের জন্য। তখনও তাঁর দোকানে আগুন লাগেনি। ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর। তাই দোকানে দাঁড়াতে পারছিলেন না। কোনো রকমে তিনটি বস্তায় কিছু পোশাক ঢুকিয়ে ওপর থেকে নিচে ফেলে দেন। ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় শেষে নেমে আসেন। সেই তিন বস্তা পোশাক আর পাননি। বিকেলে আগুন নিভে এলে আবার দোকানে ঢুকেছিলেন তিনি। দোকানের ডেকোরেশনসহ চার ভাগের তিন ভাগ পোশাকই পুড়ে গেছে। পুঁজি শেষ হয়ে গেছে তাঁর। তবে সব ছাপিয়ে তাঁর চিন্তা, ‘এখন কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না। ছেলের মাকেই বা কী সান্ত্বনা দেব? খুব চিন্তায় পড়ে গেছি।’
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।