সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
আবারও কর্মবিরতিতে গেলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা (চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিটিই)। সোমবার রাত ১২টার পর সব ধরনের ট্রেন চালানো থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন তারা। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন প্রদান ও আনুতোষিক সুবিধা না পেলে ট্রেন বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিলেন তারা।
সোমবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা পদে পদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আওয়ামী সরকার যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখেনি, বর্তমান সরকারও আমাদের দাবি মেনে নেয়নি। আমরা বাধ্য হয়ে আবারও কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। রাত ১২টার পর সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখব। কোনো অবস্থায়ই আমরা ট্রেন চালাব না। তবে রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন বিভিন্ন স্টেশন থেকে ছাড়বে, সেগুলো শেষ স্টেশনে পৌঁছাবে।
এ প্রসঙ্গে সোমবার রাত ৮টা ২৫ মিনিটে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বসেছি। আমরা তাদের দাবির প্রতি সহমত জানিয়েছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাও করছি সমস্যার সমাধান করতে। আমরা আশা করছি, সমাধানও হবে। এজন্য আমরা তাদের প্রতি আহবান রেখেছি, তারা যেন ট্রেন চলাচল বন্ধ না রাখে। আশা করছি, তারা ট্রেন চালাবেন।
মজিবুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল কর্মবিরতি পালন করলে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল। পরে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। এরপর বারবার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিলেও এর কোনো সমাধান এখনো হয়নি।
সমস্যা সমাধানে সোমবার ঢাকার কমলাপুরে আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি। বৈঠক থেকে বের হয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, রেলওয়ের কর্মকর্তারা আরও কিছুদিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সাফ বলে দিয়েছি, সোমবার রাত ১২টার আগে আমাদের হাতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের কাগজপত্র দেবেন। আমাদের ভাতা আগে যেমন ছিল, তেমন দিতে হবে। আমরা চার বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি। তারা বারবার আমাদের কাছে সময় নিয়েছেন। যখন আমরা আলটিমেটাম দিই, শেষ সময়ে এসে তারা আমাদের সঙ্গে বসেন; কিন্তু কোনো দাবি পূরণ হয় না। এজন্য এবার আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি না।
সূত্র জানায়, বৈঠক করতে রানিং স্টাফদের রেল ভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনকারীরা। পরে সোমবার বিকাল ৫টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারা।
এ প্রসঙ্গে সোমবার রাত ৯টায় রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা সোমবার বিকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা অনুরোধও করেছি কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে, তারা তা মানেনি। তারা ট্রেন চালাবে না বলে প্রকাশ্যেই বৈঠকে বলেন। তবু তাদের প্রতি আমরা বারবার অনুরোধ জানিয়ে বলেছি, এ সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি।
সূত্রমতে, দেশে ১৭শর বেশি রানিং স্টাফ কাজ করেন। দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হতো বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের একদিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় একদিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতিমাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। মূল বেতন হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, এর সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হতো। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করে। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।
চট্টগ্রাম থেকে ১০ হাজার যাত্রীর যাত্রা অনিশ্চিত: চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃনগর, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন মিলে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। কর্মবিরতির ঘোষণায় আজ ট্রেন চলাচল নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এতে জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করতে অনেকে বিপাকে পড়েছেন।
চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান বলেন, ‘মঙ্গলবার ভোর ৭টায় ঢাকায় উদ্দেশে যাওয়ার কথা ছিল। টিকিটও কিনেছি। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। রেলওয়ের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত কিছু জানানো হচ্ছে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা রেলের আইনে বেতন চাচ্ছি। আইনের বাইরে কিছু চাচ্ছি না। রোববার আমাদের প্রতিনিধি সভা হয়েছে। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আর কোনো বৈঠকে বসব না। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হবে। ইউনিয়নের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক গোলাম শাহরিয়ার বলেন, আমরা দাবিতে অনড়। মধ্যরাত (সোমবার) থেকে ট্রেন চালাব না।
রাজশাহীর চিত্র একই: রাজশাহী রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির অংশ হিসাবে রাজশাহীতে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। আমাদের অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।