সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাসের ঝড়, হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের খবরে নেটিজেনদের উল্লাস
অনলাইন নিউজ ডেক্স
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে উচ্ছ্বাসের ঝড়। জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এবং নিহত ও আহতদের পরিবারসহ দেশের সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নেটিজেনদের উল্লাসপূর্ণ ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মিম, হিউমার ও স্যাটায়ার পোস্টের মাধ্যমে মানুষ টুইটার ও ফেসবুকে #হাসিনা, #ট্রাইব্যুনাল, #ফ্যাসিস্ট, #হ্যাংহাসিনা হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন। একদিকে নেটিজেনরা রায়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন, আর বিগত দিনের ফ্যাসিবাদের নির্মমতার কথাও স্মরণ করছেন। জুলাই আন্দোলনের পেজগুলোতে উল্লাসে ভাসছে নেটিজেনদের পোস্ট, ভাইরাল হয়েছে সাকা চৌধুরীর উক্তি এবং কাদের মোল্লার চিঠি।
রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক স্ট্যাটাস, কমেন্টস, মিম, পোস্ট বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষ আনন্দ মিছিল করেছেন। মিষ্টি বিতরণ থেকে শুরু করে দলীয় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে উদযাপনের নানা দৃশ্য ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। দুপুরের পর থেকেই ফেসবুকে অসংখ্য ব্যবহারকারী উল্লাস প্রকাশ করে একই ধরনের পোস্ট দিতে শুরু করেন। অনেক নেটিজেন এই রায়কে ‘ন্যায়ের পুনঃস্থাপনের প্রতীক’ হিসাবে দেখছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিনের দমন-পীড়ন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের পর এই রায় সাধারণ মানুষের মনে ন্যায়বিচারের প্রতি নতুন আস্থা তৈরি করেছে। ভাইরাল হওয়া ছবি, ভিডিও ও পোস্টগুলো জনমনে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সেই অনুভ‚তিকে আরও দৃঢ় করছে। আরাফাত ইসলাম নামের এক ব্যবহারকারী তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফাঁসি দে।’
মিরাজুল ইসলাম নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘শহীদের রক্তের একমাত্র বদলা ন্যায়বিচার। মৃত্যুদণ্ডই ছিল রক্তপিপাসু ও দেশদ্রোহী খুনি হাসিনার একমাত্র ন্যায্য পাওনা। এই রায় কার্যকরের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ।’
তানজিল হোসেন নামের একটি আইডি থেকে দেওয়া একটি ফেসবুক ভিডিওতে দেখা যায়, হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে স্লোগান ও মিষ্টি বিতরণ।
ব্যক্তিগত অনুভূতি, প্রজ্ঞাপন ও প্রতিশ্র“তির সঙ্গে মিম, গিফ এবং স্যাটায়ার পোস্টও দেখা গেছে। কিছু ব্যবহারকারী এক্স প্ল্যাটফর্মে (টুইটার) ‘হাসিনার ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে’ পোস্ট শেয়ার করেছেন।
জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আহত যোদ্ধা ইয়ামিন ইসলাম ফেসবুকে লেখেন, ‘আদালত ফাঁসির রায় দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের আর বেশি কিছু চাওয়া নেই। শুধু চাই রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়।’
‘রেড জুলাই’ নামক ফেসবুক পেজে জুলাই আন্দোলনের শহীদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজিদের মায়ের ৪ আগস্টের এক ভিডিও পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘মায়ের এই কান্না কখনোই বৃথা যাবে না।’ পরবর্তীতে পেজে আরও একটি পোস্ট প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়, ‘হে আল্লাহ, হাসিনার ফাঁসির রায় শুনিয়েছ, শুকরিয়া তোমার। তবে জাজমেন্ট দিনে তোমার ইনসাফ পাওনা রইল। হাসিনা বাহিনীর পাপ এর চেয়ে অনেক অনেক ভারী।’
এদিন ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর একটি পুরোনো ভিডিও। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেন চালু থাকে জজ সাহেব। এখানে একদিন হাসিনারও বিচার হবে!’ ভিডিওটি শেয়ার করে আসিফ সালেহ নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনার কথাই সত্যি হলো, কিন্তু আপনি দেখে যেতে পারলেন না।’ ইউটিউবের একটি চ্যানেল থেকেই ভিডিওটি ১০ লাখ ভিউ হয়।
মাবরুর রশিদ বান্নাহ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘শহীদের মাই-ই বোঝেন এই রায়ের প্রকৃত অর্থ। এই রায়ের মধ্য দিয়ে আজ থেকে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।’
আইন ও সামাজিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া কেবল আনন্দ উদযাপন নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাবও ফেলতে পারে। ন্যায়ের দাবি, বিচার ও অতীতের ভুলের হিসাব‑নিকাশ সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় করে তুলতে পারে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষক ইমদাদুল হক বলেন, রায়ে ফেসবুকে যে উল্লাস দেখা যাচ্ছে, তা আসলে জনসাধারণের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার ফল। মানুষ রায়টিকে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি নতুন অধ্যায় হিসাবে দেখছে।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য লিখেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে খুনি হাসিনাকে সে দেশের নিরাপদ আশ্রয় থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবিতে, দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘সুবিচার বাস্তবায়ন গণকমিটি’ গঠন করুন।
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ লিখেছেন, খুনি হাসিনার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়ে ইনসাফ কায়েমের সূচনা হোক। দিনশেষে সত্যেরই বিজয় হয়। তার এক পোস্টে উঠে আসে একই ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লার লেখা একটি চিঠি। চিঠিতে কাদের মোল্লা জনৈক রনিকে লিখেছেন, ‘যদি কখনো সময় পাও বা ইচ্ছে হয়, তবে আমার ফাঁসির পর একবার হলেও বলো বা লিখো, কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের এক ব্যক্তি নয়। আমার আত্মা কিয়ামত পর্যন্ত কাঁদবে, আর কসাই কাদেরের আত্মা হাসবে।’
এস এম ফরহাদ এই চিঠি পোস্ট করে মন্তব্য করেছেন, ‘তারা চায় মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে, কিন্তু আল্লাহ তার নূরকে পূর্ণতা প্রদান করবেনই।’
