স্কুল শিক্ষক, ঝাড়ুদারদের নিয়ে বিশ্বকাপে চলে এসেছে নিউজিল্যান্ডের এই দল


স্কুল শিক্ষক, ঝাড়ুদারদের নিয়ে বিশ্বকাপে চলে এসেছে নিউজিল্যান্ডের এই দল
ক্লাব বিশ্বকাপ মানেই বড় বড় ক্লাব, বড় বড় তারকা। কিন্তু সেই দুনিয়ায় একেবারেই আলাদা গল্প নিয়ে এসেছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটি এফসি। তারা কোনো পুরোদস্তুর পেশাদার ক্লাব না। দলের খেলোয়াড়দের কেউ স্কুল শিক্ষক, কেউ রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, কেউবা ছাদ পরিষ্কার করেন বা সফট ড্রিঙ্কস বিক্রি করেন।এই টুর্নামেন্টে খেলতে তারা নিজেদের চাকরি থেকে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। আজ রোববার তারা খেলতে নামবে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে। ম্যাচটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটির টিকিউএল স্টেডিয়ামে।অকল্যান্ড সিটির জেনারেল ম্যানেজার গর্ডন ওয়াটসন বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটা রোমাঞ্চকর যাত্রা। আমরা সাধারণ মানুষ, কিন্তু অসাধারণ কিছু করতে যাচ্ছি এমন এক ইভেন্টে, যা হবে মহাকাব্যিক।’ওয়াটসন বিশ্বাস করেন, মধ্য যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ, বিশেষ করে টেনেসির চাটানুগায় তাদের দলের সঙ্গে একটা সংযোগ খুঁজে পাবেন। কারণ এই শহরেই অকল্যান্ড তাদের ঘাঁটি বানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্ডারডগের মধ্যেও আন্ডারডগ। আমাদের দলে রিয়েল এস্টেট এজেন্ট আছে, সফট ড্রিঙ্কস বিক্রেতা আছে, স্কুল শিক্ষক আছে। এরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সপ্তাহে তিনটা করে ম্যাচ খেলে।’এই টুর্নামেন্টটা কোনো ব্যক্তিগত অর্জনের লোভে খেলতে আসেনি দলটা। এখানে তাদের উদ্দেশ্যটা বেশ মহৎ। ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে যেকোনো প্রাইজমানি পেলেই তারা সেটা কাজে লাগাবে তাদের কমিউনিটির জন্য। পরিকল্পনা আছে, মাউন্ট রসকিল ইন্টারমিডিয়েট স্কুলের সঙ্গে মিলে আধুনিক স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি তৈরি করার। উদ্দেশ্য, মাঠের ভেতর আর বাইরে তরুণদের গড়ে তোলা।ওয়াটসন বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকা। এই ধরনের টুর্নামেন্টে খেলা আমাদের কাজকে আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে। আমরা চাই, ভবিষ্যতে একটি অল-ওয়েদার মাঠ তৈরি করতে। এটা শুনতে ছোট একটা প্রজেক্ট মনে হলেও, আমাদের কাছে এটা অনেক বড়।’টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচ না জিতলেও তারা অন্তত ৩.৫৮ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার পাবেই। আর যারা চ্যাম্পিয়ন হবে, তাদের জন্য আছে ১২৫ মিলিয়ন ডলার।এই নিয়ে অকল্যান্ড সিটির ১২তম ক্লাব বিশ্বকাপ। ওসেনিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তারা টানা চার বছরের র‍্যাঙ্কিং বিবেচনায় জায়গা করে নিয়েছে। এবারের ৩২ দলের মধ্যে একমাত্র অ-পেশাদার দল তারাই।তাদের গ্রুপটা আবার সবচেয়ে কঠিন – বায়ার্ন মিউনিখ, পর্তুগালের বেনফিকা আর আর্জেন্টিনার বোকা জুনিয়র্স। দলের ফরোয়ার্ড হ্যারিস জেব বলেন, ‘এই বিষয়টা আমাদের মাথায় ছিল বছরের শুরু থেকেই। এখন আমরা দিন গুনছি। হ্যারি কেইন, জামাল মুসিয়ালাদের বিপক্ষে খেলাটা আমাদের স্বপ্ন। ছোটবেলায় ওদের খেলাই দেখেছি। এখন ওদের বিপক্ষে খেলব।’এই দলের খেলোয়াড়েরা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিজেদের মূল চাকরি করেন, সপ্তাহে চারদিন রাতে অনুশীলন করেন এবং সপ্তাহান্তে ম্যাচ খেলেন। ফরোয়ার্ড রায়ান ডি ভ্রিস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা আমাদের অনেকের জন্যই কঠিন। কেউ কেউ বাবা, সন্তানদের খুব কম সময় দেখতে পান। সকালে দেখা হয়, রাতে বাড়ি ফেরেন ৯টা বা ১০টার দিকে। তারপর আবার একই রুটিন। এটা ত্যাগ, যা আমরা খেলোয়াড় হিসেবে করি। ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নিতে পেরে আমরা কৃতজ্ঞ ও গর্বিত। আমরা একমাত্র অপেশাদার দল, এটা কঠিন ঠিকই। কিন্তু এটাই আমাদের যাত্রা, আর আমরা প্রতিটা পদক্ষেপ উপভোগ করব।’