স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও এ সিরাজদিখানের অবহেলিত জনপদ চান্দের চর-খাসকান্দী।
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের একটি প্রত্যন্ত ও অবহেলিত জনপদের নাম চান্দের চর-খাসকান্দী। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও এই জনপদের মানুষ রাষ্ট্রীয় সেবার মূলধারায় ঢুকতে পারেনি। উপজেলা খাসকান্দী বেগম বাজার ব্রিজ হতে চান্দেরচর গাজী মার্কেট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল অবস্থায় প্রাকৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এ অঞ্চল। আর সেই বিচ্ছিন্নতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নাগরিক জীবন ও মৌলিক অধিকার প্রাপ্তিতে।স্বাস্থ্য, শিক্ষা কিংবা প্রশাসনিক সেবা সবকিছু পেতে এখানকার প্রায় ২০ হাজার মানুষকে পাড়ি দিতে হয় ধলেশ্বরী নদী। বিকল্প হিসেবে রয়েছে মাত্র একটি খানাখন্দে ভরা কাঁচা সড়ক। যা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পরেও পাকা হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাজুড়ে সৃষ্টি হয় কাদা ও গর্তের। অন্যদিকে রোদে রাস্তাটি পরিণত হয় ধুলার রাজ্যে। ফলে পথচারী ও যানবাহন চলাচল হয়ে ওঠে সীমাহীন দুর্ভোগের।বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারীরা আছেন চরম দুর্ভোগে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমাজপতি,জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধন্যা দিয়ে, মানববন্ধন, বিক্ষোভ করেও রাস্তায় চলার স্বাধীনতা পায়নি দুই গ্রামের মানুষ।আজ বুধবার সকাল ১১ টায় খাসকান্দী বেগম বাজার ব্রিজ এলাকায় স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে আবারও এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। বালুচর ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, খাসকান্দী উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি কিন্ডারগার্টেন ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। তারা প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তাটির জরুরি সংস্কার ও পাকাকরণের দাবি জানান। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা আর আশ্বাস শুনতে চাই না, আমরা চলার রাস্তা চাই।মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগীরা জানান, নির্বাচন এলেই আশ্বাস আসে, স্বপ্ন দেখায় জন প্রতিনিধিরা। কিন্তু তাদের দেওয়া আশ্বাস আর জনসাধারণের দেখা স্বপ্ন ঘর থেকে বেরোলেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। সকল প্রতিশ্রুতি আর স্বপ্ন মিলে যায় বৃষ্টির জল আর কাঁদা জলের সাথে।খাসকান্দী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া সালমান মারিয়াম দৈনিক বাংলাদেশকে জানান, স্কুলে যেতে অটোরিকশায় উঠলে ঝাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়, আর হেঁটে যাওয়ার সময় জুতা হাতে নিয়ে যেতে হয়। মাঝে মাঝেই পড়ে জামাকাপড় নষ্ট হয়, আহত হয়েছে অনেকেই। আমরা চাই দ্রুত রাস্তাটি পাঁকা করে দেওয়া হোক।অটোরিকশা চালক মিন্নত আলী দৈনিক বাংলাদেশকে জানান, গরীব মানুষ অটোরিকশা চালিয়ে চলি, কিন্তু রাস্তার কারণে মানুষ রিক্সায় উঠেনা। এভাবে আর চলা যায় না। আমরা রাস্তার সংস্কার চাই, পাকা রাস্তা চাই।খাসকান্দী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু রাস্তার উন্নয়ন হয়নি ৫৪ বছরেও। দেলোয়ার হোসেনের আক্ষেপ মরার আগে দেখতে চান পাকা রাস্তা। এলালার মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। দুই গ্রামে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি করতেও দ্বিতীয়বার ভাবেন বাইরের মানুষজন। এর প্রধান কারণ অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নাগরিক সেবার ভয়াবহ ঘাটতি। এক কথায়, উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই জনপদে। যেন রাষ্ট্রীয় সেবার মানচিত্র থেকে মুছে আছে তারা। এ ব্যাপারে সিরাজদিখান উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ উল্লাহ জানান, রাস্তার বিষয়টি প্রকৌশল অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিস ডিসি অফিসহ সংশ্লিষ্টরা অবগত আছেন। শীগ্রই সরেজমিনে সার্ভে করে উপজেলা, জেলা বা ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে রাস্তাটি সংস্কার করে দেওয়া হবে।মানববন্ধনে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।উল্লেখ্য, এই এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। রয়েছে ১৫টি মসজিদ, ২টি মাদ্রাসা, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৩টি বাজার, ৩টি নৌকাঘাট, ৩টি পাকা সেতু এবং ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ। কিন্তু এসব জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সঙ্গে সংযুক্ত প্রধান সড়কটি আজও উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি।
