স্লোগানে উত্তাল মহাসড়ক
অনলাইন নিউজ ডেক্স
ফরিদপুর-৪ আসন থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন কেটে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা গোলচত্বরের আশপাশেসহ ৬টি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন তারা।
এতে ২১ জেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ‘ভাঙ্গার এক ইঞ্চি মাটিও নগরকান্দার সঙ্গে মিশতে দেওয়া হবে না, ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, ভাঙ্গাবাসীকে মুক্তি দে’ আন্দোলনকারীদের স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে মহাসড়ক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজারো মানুষ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া, মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত অবরোধ চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধের কারণে সব ধরণের যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ তালিকায় ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে (সালথা-নগরকান্দা) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টি প্রকাশের পর থেকে ভাঙ্গা উপজেলাবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ও সন্ধ্যায় দুই দফায় ৯ ঘণ্টা ভাঙ্গা উপজেলায় মহাসড়কে অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এক পর্যায়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ওসি মো. আশরাফ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এ দিকে মঙ্গলবার একই দাবিতে ভাঙ্গা উপজেলাবাসী পুনরায় সকাল থেকে তৃতীয় দফায় দুটি ইউনিয়ন ফিরে পেতে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ ঘটনায় দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় বিভিন্ন পর্যায়ের যানবাহন বন্ধ থাকায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েক হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
মুন্নি খানম নামের একজন বলেন, সকাল ৮টার দিকে ফরিদপুর থেকে প্রাইভেটকারে জরুরি কাজে বিদেশগামী ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। মহাসড়ক অবরোধের কারণে ফরিদপুর ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছি। আমার ছেলের বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে সমস্যা হয়েছে এজেন্সির সঙ্গে। টাকা ফেরত পেতে মামলা করেছিলাম, আজকে এজেন্সির সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে বসার কথা ছিল। গাড়ি ভাড়া করে সেখানে যাচ্ছিলাম, কিন্তু যাওয়া হলো না। এতে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।
আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিক মিঞা বলেন, আমাদের দুটি ইউনিয়ন কেটে নেওয়ার আগে আমাদের জানানোর দরকার ছিল। ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পুনরায় ফরিদপুর-৪ আসনে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অবরোধ থাকবে।
ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম বলেন, আমাদের দুটি ইউনিয়ন কেটে নেওয়া ঠিক হয়নি। আমরা যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবরোধ করেছি। এর আগে গত শুক্রবার বিক্ষোভ আন্দোলন করেও কোনো সমাধান পাইনি আমরা।
তিনি বলেন, আমাদের ফরিদপুর-৪ আসনের নেতা শহিদুল ইসলাম বাবুল আদালতে রিট করেছেন। রিটের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও নির্বাচন কমিশন থেকে দুটি ইউনিয়ন ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা না আসায় বাধ্য হয়ে আম-জনতা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বলেন, মহাসড়কটি সবদিক দিয়ে আটকে ফেলায় চারদিকেই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখায় আমাদের পুলিশের গাড়িও মুভ করতে ঝামেলা হচ্ছে। তবে শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
