হাজারীবাগে যত্রতত্র পশু জবাই, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য
অনলাইন নিউজ ডেক্স
রাজধানীর হাজারীবাগে আধুনিক জবাইখানার ৩৮ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছে। এ কারণে নগরবাসী চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।
হাজারীবাগের জবাইখানার জন্য ২০১৯ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করে। একই বছর তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এর উদ্বোধন করেন। তবে পরে ডিএসসিসির সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জবাইখানাটি পরিচালনায় তেমন আগ্রহ দেখাননি। ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় জবাইখানার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগে হাজারীবাগ ও নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকায় ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পশু জবাই তদারকি করলেও ৫ আগস্টের পর থেকে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো যত্রতত্র পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছে। এ সুযোগে বিভিন্ন সময় অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত পশুও জবাই করা হচ্ছে। এছাড়া ভারত থেকে চোরাই পথে আসা মাংসের রমরমা বাণিজ্যও চলছে।
শুক্রবার সরেজমিন হাজারীবাগ, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের এলাকাগুলোর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে-দোকানগুলোতে বিক্রি হওয়া মাংসে সিটি করপোরেশনের কোনো সিল নেই। ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র পশু জবাই করছেন। মাংস সংরক্ষণেও কোনো স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। জবাই প্রক্রিয়ার সময় পরিবেশ দূষণ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির ঘটনা আরও প্রকট হয়েছে। এসব পশুর মাংস কতটা রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত তা বিক্রেতারা বলতে পারছে না। এছাড়া বাজারে তদারকি না থাকায় ইচ্ছামতো দাম আদায় করা হচ্ছে। আবার এ সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে চোরাই পথে আনা ফ্রোজেন মাংস বিক্রি করছে। নিউমার্কেট, হাজারীবাগ, লালবাগ ও কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের এলাকায় ওই মাংসের বিশাল বিক্রেতা চক্র গড়ে উঠেছে। বাজারমূল্যের চেয়ে কম দাম হওয়ায় হোটেল ব্যবসায়ীরা ওইসব মাংস ব্যবহার করছে।
হাজারীবাগ কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতা মো. নাদিম জানান, আধুনিক জবাইখানা চালু থাকলে সেখানেই গরু জবাই করতাম। অন্যত্র পশু জবাই করতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ এবং বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। আগে সিটি করপোরেশনের পশু চিকিৎসক এবং কর্মকর্তারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেন এবং সরকারি সিল দিতেন। কিন্তু এখন তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। কামরাঙ্গীরচরের একাধিক মাংস ব্যবসায়ী বলেন, হাজারীবাগ আধুনিক জবাইখানার সুবিধা বন্ধ থাকায় নিজ উদ্যোগে পশু জবাই করতে হচ্ছে। তবে আমরা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে এতে করে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কিছুটা বেড়েছে।
হাজারীবাগ ভাগলপুর লেনের বাসিন্দা গোলাম রহমান জানান, জবাইখানাটিতে আধুনিক সুবিধা থাকার পরও বছরের পর বছর অচল। এটি ব্যবহার করা হলে এলাকাবাসী নিরাপদ মাংস পেত। কোটি কোটি টাকার এ প্রকল্প শুধুই অপচয়ের উদাহরণ।
হাজারীবাগ এলাকার ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে জবাইখানার কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অসুস্থ পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। সিটি করপোরেশনের এ অবহেলায় শুধু জবাইখানা অকার্যকর হয়ে পড়েনি বরং সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। জবাইখানার কোনো কার্যক্রম নেই। এখন শুধু জবাইখানার কর্মচারীদের বেতন নিতে দেখা যায়।
জবাইখানাটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন মাংস বিক্রেতা ও এলাকাবাসী। তারা বলেন, সিটি করপোরেশন অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মাংস ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবেন। সাধারণ মানুষও সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ মাংস কিনতে পারবেন।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির জানান, হাজারীবাগ আধুনিক জবাইখানার কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। ইজারাদান প্রক্রিয়া চলমান থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।