হাসিনার মৃত্যুদণ্ড, ভবিষ্যতের শাসকরা যেন শিক্ষা নেন
অনলাইন নিউজ ডেক্স
চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রত্যাশিত বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, এই রায়ে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষও ন্যায়বিচার পেয়েছে।
তারা আরও বলেন, নির্বিচারে গুলি এবং হত্যাকাণ্ডের দায় শেখ হাসিনাকে নিতেই হবে। কারণ অন্যায়-অবিচার এবং জুলুম-নির্যাতন করে কেউ পার পায় না। একই সঙ্গে এ ঘটনা থেকে ভবিষ্যতের শাসক এবং রাজনৈতিক দলগুলোও যেন শিক্ষা নেয়। তারা যেন স্বৈরাচারী না হয়, জুলুমবাজ না হয়। গুম-খুন হত্যা ও রক্তের হলিখেলায় মেতে না ওঠে।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, রায়টা ঠিকই আছে। বাংলাদেশের জনগণ নিশ্চিতভাবেই এটাই প্রত্যাশা করেছিল। অনেক দিন ধরে ইনভেস্টিগেশন চালানো হয়েছে। তাদের ফোনকলগুলো চেকিং রিচেকিং করা হয়েছে। এভিডেন্সগুলো পরিষ্কার করে পাওয়ার পরেই রায় দেওয়া হয়েছে। এগুলো আমরা পত্র-পত্রিকায় পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, সুতরাং আমার মনে হয় এটা জাস্টিফাইড এবং যারা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন তারা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষও ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) শুধু অপরাধীই নন, এক বছর হয়ে গেছে, এখনো শুধু হুমকি-ধামকি, একে ধরব, ওকে মারব। এদের সামান্য অনুতাপ নেই। তারও নেই। আওয়ামী লীগারদের নেই। সুতরাং এই রায় জাস্টিফাইড। আমি তো ডেফিনেটলি তাজুলকে অভিনন্দন জানাতে চাই। কারণ তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে প্রফেশনালি পুরো জিনিসটাকে চালিত করেছেন।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শেখ হাসিনা তার শাসন আমলে নির্বাচনকে বাদ দিয়ে এবং নির্বাচনকে কোণঠাসা করে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছিলেন। সেটার কারণেই এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়। বলপ্রয়োগ করতে হয়। জবরদস্তি করতে হয়। নির্বিচারে গুলি এবং হত্যাকাণ্ড করতে হয়। এসবের দায় তো শেখ হাসিনাকে নিতেই হবে। তিনি আরও বলেন, তবে আমি মনে করি বিচার প্রক্রিয়া যথাযথভাবে হওয়া উচিত। বিচারই হওয়া উচিত, প্রতিশোধ নয়। এই বিষয়টি আমি নিশ্চিত বলতে পারব না, কারণ আমি বিচার প্রক্রিয়া দেখিনি। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে যে ভূমিকা সেটার দায় তো শেখ হাসিনার অবশ্যই আছে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরনের রায়ের মধ্য দিয়ে কি পরবর্তী সরকাররা কোনো শিক্ষাগ্রহণ করবে? তারা কি জনবিরোধী তৎপরতা থেকে বিরত থাকবে? কিংবা জনবিরোধী তৎপরতা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে? বর্তমান সরকার আজকেই যে কাজটা করল, এটা দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। কারণ আজকেই তারা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি করল গোপনে অস্বচ্ছতার সাথে জোরজবরদস্তি করে। ফলে এই শিক্ষাটা দরকার যে, বল প্রয়োগ করলে, স্বৈরশাসন করলে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করলে, তাদের ওপর জুলুম করলে তার স্থান ইতিহাসে জনবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হয়।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এমআইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, অন্যায়, অবিচার, জুলুম এবং পাপ করলে তার খেসারত দিতে হয়। আল্লাহর বিচার একটা আছে। তিনি (শেখ হাসিনা) ১৪শ মানুষকে হত্যা করেছেন। এর মধ্যে বাচ্চারা আছে। শিক্ষার্থীও আছে। এছাড়া বিভিন্নভাবে নিরপরাধ মানুষদের বিভিন্ন সময় অন্যায়-অবিচার জুলুম, গুম-খুন করেছেন। তিনি তো সুপ্রিম অথরিটি হিসাবে নির্দেশ দিতেন। তার একটি তো ফলাফল আছে। এটা যদি আধ্যাত্মিক দিক থেকে দেখি সেটাও আছে। আবার জাগতিক বিচারেও অন্যায়-জুলুমের বিচার হয়। ফলে সবাই যা ধারণা করেছিল রায় তদরূপ হয়েছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতন করে কেউ পার পায় না। সুতরাং সবাই যেন জুলুম নিপীড়ন অন্যায় অবিচার থেকে বিরত থাকে। শেখ হাসিনা যে জুলুম-নিপীড়ন করেছে, অন্যায়-অবিচার করেছে তার বিচার আজ হলো।
সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী প্রতিক্রিয়ায় বলেন, হাসিনাসহ দুই ফ্যাসিস্টই বাইরে। ফলে এই রায় কার্যকর করতে হলে তাদের আগে ফেরত আনতে হবে।
