৫০০ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ মাঠে তদন্তে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা


গুদাম থেকে ৫০০ কোটি টাকার সার গায়েব ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্তে মাঠে নেমেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দোষী কে, কারা জড়িত, কিভাবে এ ঘটনা ঘটছে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের টিম কাজ শুরু করেছে। এর আগে ২৬ আগস্ট ‘৫০০ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ-কাগজে মজুত বাস্তবে নেই’ শিরোনামে রিপোর্টটি প্রকাশ হয়। ওই রিপোর্টের সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা তা নিশ্চিত করেন। সূত্র আরও জানায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানা খাতের দুর্নীতির সংবাদ বেরিয়ে আসছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতি মুক্ত করতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় কৃষকের সার নিয়ে দুর্নীতির ঘটনাটি প্রশাসন আমলে নিয়েছে। তদন্ত টিম প্রাথমিকভাবে মনে করছে ঘটনাটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বিভিন্ন সার গুদাম ঘিরে ঘটেছে। এসব ঘটনার নেপথ্যে পরিবহণ ঠিকাদার, গুদাম ইনচার্জসহ বিসিআইসির অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারে। তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পটুয়াখালী, বরগুনা, চটগ্রামসহ যেসব অঞ্চলের গুদামে ঘটছে সেখানেও অবস্থান করে খতিয়ে দেখবে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনতে পারে বিসিআইসির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। তদন্তের সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, গুদাম থেকে সার গায়েবের ঘটনাটি অনেক বড়। এটি একটি বড় মাপের দুর্নীতি। দেশের স্বার্থে এত বড় দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে বসে থাকা ঠিক নয় বলে মনে করছেন সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যে কারণে এ ঘটনার নেপথ্যে কারা কলকাঠি নেড়েছে, ফায়দা লুটে নিয়েছে কারা তাদের শনাক্ত করার উদ্দেশ্য তদন্ত শুরু হয়েছে। কাগজে-কলমে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের ইউরিয়া সারের মজুত থাকলেও এর অস্তিত্ব মেলেনি গুদামে। পরিবহণ ঠিকাদার, বাফার গুদাম ইনচার্জ ও বিসিআইসির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা কৌশলে ৯১ হাজার ৬৯৭ টন সার আত্মসাৎ করেছে। এরমধ্যে পরিবহণ ঠিকাদার ৬৬ হাজার টন ইউরিয়া গায়েব করেছেন। গুদামে পৌঁছে না দিয়েই সরবরাহ দেখিয়েছেন খাতা-কলমে। এছাড়া পটুয়াখালীর বাফার গুদাম ইনচার্জ সাদা কাগজে রিসিভ দেখিয়ে লোপাট করেন ২৩৮৭ টন সার। খোদ যমুনা সার কারখানার গুদাম থেকে গায়েব হয়েছে ১৯ হাজার টন সার। এ ঘটনা স্বীকার করে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান জানান, বাফার গুদামে যে পরিমাণ সারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি সেটিই তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলা করা ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) পাঠানো হয়েছে। দুদকের তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের দুর্নীতির একটি ছোট দৃষ্টান্ত মাত্র। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী যে বিকাশ ঘটেছিল এ প্রতিষ্ঠানের একাংশ জড়িয়ে পড়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা যারা এর সঙ্গে জড়িত শুধু তারাই নয়, বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সুরক্ষা ছাড়া এ সিস্টেম্যাটিক দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি হয়েছে তা নয়, লাভবান হয়েছে যারা সুরক্ষা দিয়েছে, ওইসব প্রভাবশালী মহলও। প্রত্যাশা করব-এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সুশাসন ও দুর্নীতি মুক্ত করার একটি বিশাল সুযোগ হয়েছে এই নতুন বাংলাদেশে। এখন এ ধরনের ঘটনায় কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা হিসাবে থাকবে। বিসিআইসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরবরাহ পরিবহণ ঠিকাদার যে ৬৬ হাজার টন সার আত্মসাৎ করেছে, সে ব্যাপারে মের্সাস নবাব অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আর যমুনা সার কারখানার গুদাম থেকে আত্মসাতের ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত চলছে। একইভাবে পটুয়াখালী বাফার গুদাম ইনচার্জের কাছে আত্মসাতের ঘটনার জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকৃত জবাব মেলেনি।