জয়ে আশাবাদী বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি, জাতীয় পার্টি অংশ নিলে বদলে যাবে চিত্র
অনলাইন নিউজ ডেক্স
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬টি আসনে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলগুলোর প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের প্রচারণায় সরগরম আসনগুলো। প্রার্থীরা দলীয় সভা-সমাবেশের পাশাপাশি স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন। ভোটারদের সঙ্গে কুশল-বিনিময় করে দোয়া চাইছেন। আসনগুলোতে কোথাও বিএনপি, কোথাও জামায়াত, কোথাও এনসিপির নেতাকর্মীরা প্রচারে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে। এসব আসনে নিজেদের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী তারা। তবে জেলার বিভিন্ন আসনে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। তারা দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিলে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ পালটে যেতে পারে।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার দাবি, কয়েকটি আসন ছাড়া সব আসনেই জয়ী হবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। বিশেষ করে রংপুর-১, ৩ ও ৪ আসনে তাদের প্রার্থী নিশ্চিত জয়লাভ করবেন। বাকি তিন আসনে তীব্র লড়াই হবে জামায়াত-বিএনপির।
রংপুর-১ (গংগাচড়া-সিটি আংশিক) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোর্কার হোসেন সুজন, জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী। তারা উভয়ই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। গংগাচড়ার ৯টি উইনিয়নের মধ্যে ৭টিই তিস্তার চরাঞ্চল। অতিদরিদ্র পরিবারের বসবাস। তাদের মাঝে জামায়াতের প্রচার-প্রচারণা বেশি। জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী দুই দলের নেতাকর্মীরা। তবে আসনটিতে জাতীয় পার্টি প্রার্থী ঘোষণা করলে নির্বাচনের চিত্র বদলে যাবে। সেক্ষেত্রে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার, জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। এখানে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি রয়েছে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তীর অনুসারীরা দলীয় প্রার্থী বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে জামায়াতের প্রার্থী শক্তিশালী অবস্থানে। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের প্রার্থীই জয়লাভ করবে।
রংপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল, ইসলামী আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান পিয়াল। আসনটি বরাবরই ছিল জাতীয় পার্টির। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের আসনটি দখলে রাখেন। ফলে তিনি নির্বাচন করলে ফলাফল এক রকম হতে পারে, আর না করলে আরেক রকম হতে পারে। তবে বিএনপি’র প্রার্থী সামসুজ্জমান সামু ও জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল দু’জনেই এই আসনে জয়লাভের বিষয়ে আশাবাদী।
রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা)-এ বিএনপির প্রার্থী কউনিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, জামায়াতের মহানগর আমীর এটিএম আজম খান ও এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এখানে আখতার হোসেনের পক্ষে প্রচারণায় কোমর বেঁধে নেমেছেন তার কর্মী-সমর্থকরা। নিজ প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী তারা। তবে কাউনিয়ার মধুপুরের বিএনপির কর্মী জয়নাল আবেদীন ও শমসের আলী দাবি করেন, তাদের প্রার্থীই এই আসনে জয়লাভ করবে। কারণ এমদাদুলের বাবা প্রয়াত শিল্পপতি রহিম উদ্দিন ভরসা এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন, তারপরে তারা চাচা শিল্পপতি করিম উদ্দিন ভরসা জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনে তাদের ভোটারদের মাঝে পারিবারিক প্রভাব রয়েছে।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী উপজেলা কমিটির সভাপতি গোলাম রব্বানী, জামায়াতের জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অধ্যাপক গোলজার হোসেন। এখানে বিএনপির রাজনৈতিক ভিত্তি খুবই দুর্বল। তৃণমূল পর্যায়ে দলের কাঠামো নড়বড়ে। এর বিপরীতে জামায়াত রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী। প্রচারেও দাপট বজায় রেখেছে জামায়াতের প্রার্থীর নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপি ও জামায়ত প্রার্থী দু’জনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ)-এ বিএনপির প্রার্থী জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, জামায়াতের মাওলানা মোহাম্মদ নুরুল আমিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহকারী দফতর সম্পাদক বরকতুল্লাহ লতিফ। তারা সবাই নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল ইসলামের জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদী তার দলের নেতাকর্মীরা। তবে আসনটিতে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির নুর মোহাম্মদ মণ্ডল। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে এই আসনে ভোটের চিত্র বদলেও যেতে পারে। কারণ এর আগে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এখানে তার শক্তিশালী ভোট ব্যাংক রয়েছে।
