মুশফিকের একশতে ১০০


মুশফিকের একশতে ১০০
আয়ারল্যান্ড পেসার জর্ডান নিলের তৃতীয় বলে সিঙ্গেলের জন্য দৌড় শুরু করে উদযাপনে মুশফিকুর রহিম। প্রান্ত ছুঁয়ে একটুখানি দম নিলেন; হেলমেট খুলে ব্যাট তুলে দর্শক সারি থেকে শুরু করে মাঠের এক কোণে থাকা ফটো সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রাপ্তির ঢেকুর তুললেন। এরপর উইকেটের ওপর এসে সেজদায় শুকরিয়া আদায়। এক রানের অপেক্ষা, অবশেষে পাওয়া, একটি মাইলফলক স্পর্শ করা আর একটা ইতিহাসের সঙ্গে মিশে যাওয়া; মুশফিক পেরেছেন। একশ টেস্ট খেলা ৮৩ জন ক্রিকেটারের মধ্যে এমন দারুণ কীর্তি যে শুধুই ১১ জনের—মুশফিকও তো তাদেরই একজন। ৩৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি এই ব্যাটারসহ এখন বলা যায়—ওরা এগারো জন। কলিন কাউড্রে, জাভেদ মিয়াঁদাদ, রিকি পন্টিং, জো রুট, ডেভিড ওয়ার্নারদের সঙ্গে উচ্চারিত হবে মুশফিকের নামও। ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম দিন শেষ করেছিলেন মুশফিক। তার সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিল পুরো দেশও। আগেও ১২ বার সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি; আছে ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলকও। কিন্তু এবারেরটা বিশেষ। শততম টেস্টে শতরানের ইনিংস বলে কথা—খুব কম ক্রিকেটারই যে এমন কিছু করেছিলেন। তাই তো সেই বিশেষ অর্জনের সাক্ষী হতে পারা যে কারোর জন্যই সৌভাগ্যের ব্যাপারও বলা চলে। মুশফিক সেঞ্চুরি পাবেন—এমন বিশ্বাস থেকেই শীতের সকালে গ্যালারিতে উপস্থিত শ খানেক দর্শক। বিসিবির প্রেসিডেন্ট বক্সের বাইরে তখন প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ বোর্ড পরিচালকদের অনেকেই দাঁড়িয়ে। দর্শকদের মধ্যে অনেকের ফোনের ক্যামেরার লেন্সও তখন মাঠে থাকা মুশফিকের দিকেই। দিনের প্রথম বলটাও যে খেলবেন তিনি। কিছুটা আত্মবিশ্বাস, কিছুটা ভয়, ছিল কিছুটা শঙ্কাও। উইকেটে এসে লেগ স্টাম্প বরাবর গার্ড নিলেন মুশফিক। প্রথম ওভারটি করতে এলেন আইরিশ স্পিনার ম্যাথু হামফ্রিস। প্রথম বলটা লিভ করলেন মুশফিক। গ্যালারি থেকে তখনই শুরু হয় চিৎকার। সেঞ্চুরি মুশফিক, সেঞ্চুরি মুশফিক—অল্প দর্শকও যেন তখন পুরো গ্যালারি কাঁপিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু মুশফিক ছিলেন সহজাত। কোনো চাপ কিংবা রোমাঞ্চ যেন কোনো কিছুই ছুঁতে পারেনি অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকে। পুরো এক ওভার কোনো রানই নিলেন না তিনি। একের পর এক ফিল্ডারকে কাছাকাছি রেখে উল্টো চাপ যেন বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছিল আয়ারল্যান্ড। হামফ্রিসের করা শেষ দুই বলে রীতিমতো উপস্থিত দর্শকদের ভয় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মুশফিকও। একটি তার ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগেছিল বলে বেঁচে গিয়েছিলেন। অবশ্য নিয়তি সেঞ্চুরি লিখে রেখেছিল ঠিকই, কিন্তু পথটা মসৃণ করেনি। ৯৯ রান করার চেয়ে এক রান করাই যেন সবচেয়ে কঠিন মনে হচ্ছিল তখন। প্রথম ওভারে মুশফিক সেঞ্চুরি না পেলেও দর্শকদের মধ্যে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়ছিল। পরের ওভারে এলেন পেসার নিল। এবার যে সেঞ্চুরিটা হচ্ছে—সেটা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন সবাই। এবারও ক্যামেরার লেন্সগুলো মুশফিকের দিকে। প্রথম বলেই প্রান্ত বদল করলেন লিটন। তৃতীয় বলে মিলল কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কের দেখা। চাপ, রোমাঞ্চ সব ছাপিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন তিনি। নিজের শততম টেস্টেই শতরানের ইনিংস। এরপর কতটা দূর এগিয়ে যাবেন তিনি—সে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল সবার মনেই। কিন্তু মুশফিক যেন ভুলটা করতে আর বেশি সময় নেননি। ১০৭ রানের ইনিংসেই থামলেন তিনি। হামফ্রিসের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তবে ফেরার পথেও সবার করতালিতে রাঙানো ছিল তার পুরো ইনিংস।