দীর্ঘ নীরোগ জীবনের রহস্যভেদ


দীর্ঘ নীরোগ জীবনের রহস্যভেদ
বিশ্বজুড়ে মানুষ আগের চেয়ে বেশি দিন বাঁচছে। তবে এখন লক্ষ্য কেবল আরও বেশি বছর বেঁচে থাকা নয়, বরং সুস্থভাবে বেঁচে থাকা। এ জন্য সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিচ্ছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা; অর্থাৎ জীবনকালে ব্যক্তি যেন উদ্যমী থাকেন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন এবং বয়সের ভারে জীর্ণ হয়ে না পড়েন। এ প্রচেষ্টার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হলো মাইটোকন্ড্রিয়া, যাকে প্রায়ই কোষের ‘পাওয়ার হাউস’ বলা হয়। এটি এমন শক্তি উৎপন্ন করে, যা অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট বা এটিপি উৎপাদন করে কোষগুলোকে সচল রাখে। যেহেতু বার্ধক্য ও অনেক বয়সসম্পর্কিত রোগ মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, তাই বিজ্ঞানীরা মাইটোকন্ড্রিয়ার স্বাস্থ্য ঠিক রেখে মানুষকে দীর্ঘায়ু করার লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা দেখেছেন, শক্তিশালী মাইটোকন্ড্রিয়া বার্ধক্য কমাতে সক্ষম। মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরে শক্তি উৎপাদন শ্বাসযন্ত্রের চেইন কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল। এসব অণু প্রোটন ও ইলেকট্রনকে এমনভাবে স্থানান্তর করে, যা শেষ পর্যন্ত কোষগুলোকে এটিপি তৈরিতে সহায়তা করে। গবেষকরা বহু বছর ধরে জানেন, এ কমপ্লেক্সগুলো সুপার-কমপ্লেক্স নামক বৃহত্তর, নমনীয় গোষ্ঠীতে একত্রিত হতে পারে। এ সুপার কমপ্লেক্সগুলো মাইটোকন্ড্রিয়াল শ্বসনের দক্ষতা উন্নত করে বলে মনে করা হয়। তবুও সুপার কমপ্লেক্সগুলো স্বাস্থ্য সুবিধার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত– এমন দৃঢ় প্রমাণ সীমিত। জাপানের টোকিও মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট ফর জেরিয়াট্রিক্স অ্যান্ড জেরোন্টোলজির টিম লিডার সাতোশি ইনোয়ের নেতৃত্বে গবেষণায় দেখা গেছে, মাইটোকন্ড্রিয়াল প্রোটিন সুপার কমপ্লেক্স গঠনে সহায়ক। এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র সম্প্রতি এজিং সেল সাময়িকীতে প্রকাশ হয়। এর সহলেখক ছিলেন জাপানের সাইতামা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কাজুহিরো ইকেদার। গবেষণা দলের প্রধান ড. সাতোশি ইনোয়ে বলেন, ‘আমরা আগে মাইটোকন্ড্রিয়াল প্রোটিন কক্স-৭ আরপিকে মাইটোকন্ড্রিয়াল রেসপিরেটরি সুপার কমপ্লেক্স গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এটা শক্তি উৎপাদন বাড়ায় ও কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টিকারী প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন কমিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘এর ওপর ভিত্তি করে আমরা বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ ও বার্ধক্য ঠেকানোর প্রক্রিয়ায় কক্স-৭ আরপি ও মাইটোকন্ড্রিয়াল রেসপিরেটরি সুপার কমপ্লেক্সের ভূমিকা খতিয়ে দেখছি।’ ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা গবেষকরা কক্স-৭ আরপির ব্যবহারে ট্রান্সজেনিক ইঁদুর তৈরি করেছেন। এ মডেলের সাহায্যে তারা ঘনিষ্ঠভাবে ট্র্যাক করতে পারেন– প্রোটিন কীভাবে জীবনকাল, বার্ধক্যসম্পর্কিত পরিবর্তন ও বিপাককে প্রভাবিত করে। কার্যত ফলাফল আকর্ষণীয় ছিল। কক্স-৭ আরপি ট্রান্সজেনিক ইঁদুরগুলো গড়ে বন্য প্রজাতির ইঁদুরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি বাঁচে। এর সুবিধা কেবল আয়ুষ্কালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পরিবর্তিত ইঁদুরগুলো ভালো স্বাস্থ্য নিয়েই বেঁচে ছিল। ইনসুলিন সংবেদনশীলতার কারণে তাদের গ্লুকোজ হোমিওস্ট্যাসিস উন্নত হয়। পাশাপাশি রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড ও মোট কোলেস্টেরল কম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লিপিড পরিমাপ উন্নত হয়। দলটি আরও ভালো পেশি সহনশীলতা ও লিভারে কম চর্বি জমার সন্ধান পেয়েছে। সূত্র: সায়েন্স ডেইলি।