লেবার পার্টির বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্রের অভিযোগ শরিকদের
অনলাইন নিউজ ডেক্স
অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে ১২ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেল মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি। তবে লেবার পার্টির জোট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ১২ দলীয় জোটের নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে শরিকরা লেবার পার্টির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন।
রোববার জোটের প্রধান সমন্বয়কারী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারকে চিঠি দিয়ে লেবার পার্টি জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
লেবার পার্টির প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক মো. মনির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়- শুক্রবার লেবার পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় গত তিন মাসের জোটের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে ১২ দলীয় জোট থেকে অংশগ্রহণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লেবার পার্টি এখন ১২ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও মহাসচিব মো. ফারুক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে।
এদিকে রোববার রাতে জোটের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লেবার পার্টির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদীর শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, জোটের সংহতি পরিপন্থি আলাদা কর্মসূচি পালন, জোটের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অশোভন ও উদ্ধতপূর্ণ আচরণ, জোটের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও জোটের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করার কারণে জোটের শরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অস্বস্তি বিরাজ করছিল। এমতাবস্থায় এক জরুরি সভায় লেবার পার্টি জোট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ১২ দলীয় জোটের সব নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১২ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা যুগান্তরকে বলেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে রাজনীতি করেন। তাছাড়া সম্প্রতি তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির সুধী সমাবেশ ও নৈশভোজে অংশ নেন। এ সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতাকে নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক রয়েছে। হঠাৎ করে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির সুধী সমাবেশকে ভালোভাবে নেয়নি যুগপৎ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বিএনপিও। সেখানে মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের অংশগ্রহণ জোটের অন্যান্য শরিক দলকে বিব্রত করেছে। এসব কারণে ইরানকে ১২ দল থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে জোটের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই নিজে থেকেই জোট থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান যুগান্তরকে বলেন, যে হোটেলে জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির সুধী সমাবেশ হয়েছে, ওই একই হোটেলে বেসরকারি টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে উপরে দেখতে গিয়েছিলাম। ওই সংগঠনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ আমার দীর্ঘ দিনের পরিচিত, আর আহ্বায়ক কবি ফরহাদ মজহার খেতে বলেছিলেন, তাই খেয়েছি। ওখানে যে কি অনুষ্ঠান তাও জানতাম না, আর আমন্ত্রিতও ছিলাম না। আর যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার হবে। লেবার পার্টিও তার এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছে; কিন্তু তারা (জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি) বলেন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার হবে, আমি সেখানে কেন যাব?
জোটের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এলডিপি-গণফোরামের মতো আমরাও আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করব।
২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ১২ দলীয় জোট গঠন করা হয়। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে এ জোট হয়। এ আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি।
১২ দলীয় জোট থেকে লেবার পার্টি বেরিয়ে যাওয়ার পর এ জোটে এখন ১১টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। দলগুলো হচ্ছে— মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আব্দুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিমের বাংলাদেশ এলডিপি, জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের ইসলামী ঐক্যজোট, তাসমিয়া প্রধানের জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নুরুল ইসলামের বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ও আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি ।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।