অমর্ত্য সেনের বাড়ি রক্ষায় বিশ্বের ৩০২ বিশিষ্টজনের চিঠি


নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে পৈতুক বাড়ি ‘প্রতীচী’ থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তার এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে অপতৎপরতা বন্ধে বিশ্বের ৩০২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে চিঠি লিখেছেন। ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, গত শুক্রবার চিঠি পাঠানো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী, নামকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও রাজনীতিবিদরা। চিঠিতে তারা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অপতৎপরতার তীব্র জানিয়েছেন। বিশিষ্টজনরা লিখেছেন, বিশ্বভারতী অমর্ত্য সেনকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে যে নোটিশ দিয়েছেন, তার ভাষা অত্যন্ত আপত্তিকর ও অসৌজন্যমূলক। অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে বিশ্বভারতীর জমি দখল করে আছেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটিও তারা প্রমাণ করতে পারেননি। শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি প্রতীচীর ১৩ ডেসিমেল জায়গা নিয়ে মূল সংঘাত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, ওই জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। অমর্ত্যরে দাবি, পৈতৃকভাবে এ সম্পত্তি তার প্রাপ্য। রাজ্যের ভ‚মি ও ভ‚মিরাজস্ব দপ্তরের নথিতেও তা উলে­খ রয়েছে। এসব নথি অমর্ত্যকে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অমর্ত্য সেনকে যে নোটিশ পাঠিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, অমর্ত্য সেন ১ দশমিক ২৫ একর জমির ইজারার জন্য চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু তিনি প্রকৃতপক্ষে ১ দশমিক ৩৮ একর জমি দখল করে আছেন। অর্থাৎ শূন্য দশমিক ১৩ একর বা সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুট জমি তার অবৈধ দখলে রয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল ৮৯ বছর বয়সি অমর্ত্য সেনকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নোটিশ পাঠায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। অমর্ত্য সেন বলেছেন, ১৯৪৩ সালে তার বাবা অশুতোষ সেন বিশ্বভারতীয় তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য ১ দশমিক ৩৮ একর জমি লিজ নিয়েছিলেন। এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছু বলেনি, এখন তারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে অযথা সমস্যা সৃষ্টি করছে। অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রপতি মুর্মুকে যারা চিঠি লিখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জর্জ ই আকেরলফ, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক জেমস কে বয়েস, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার অধ্যাপক অ্যান্থনি ডি কস্টা, জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক জেনিন রজার্স, ইংল্যান্ডের ডারহাম ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক বিভাস সাহা, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার স্কুল অব সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সেসের ফেলো অনিশ কুমার, দিলি­র জওয়াহেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়েক, অধ্যাপক অলকা আচার্য, কলকাতার ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধ্যাপক অভিজিৎ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুর, তৃণমূলের এমপি (রাজ্যসভা) জহর শংকর প্রমুখ। বিশিষ্টজনরা চিঠিতে লিখেছেন, অমর্ত্য সেনের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। সেই পার্থক্যকে পুঁজি করে তাকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করছেন। উপাচার্য অন্যায়ভাবে সরকারের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন এবং সেই সঙ্গে নিজের অপকর্ম থেকে সরকারের দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছেন। এতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও জানানো হয়েছে। বর্তমানে এ সংক্রান্ত মামলা আদালতে বিচারাধীন। ১৩ জুন সেই মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগে রাষ্ট্রপতির কাছে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে চিঠি লিখে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানালেন বিশ্বের বিশিষ্টজনরা।